হেলথ ডেস্ক: মাত্র একটি মিষ্টান্নের সমপরিমাণ ক্যালরি প্রতিদিন কমিয়ে দিলে বয়সী মানুষের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর রাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন আশাব্যঞ্জক তথ্য পাওয়া গেছে। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বয়স্ক মানুষের খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন আনলে স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ডে কতটা উন্নতি হয় তা যাচাই করা।
গবেষণায় অংশ নেন পঁচাশির বেশি বয়সী পাঁচশরও বেশি মানুষ। তাদের সবার দেহভর সূচক ছিল অন্তত পঁচিশ, যা অতিরিক্ত ওজনের সংকেত। অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়। একদলকে দেওয়া হয় উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাস, অন্যদলকে দেওয়া হয় মাইন্ড নামের বিশেষ খাদ্যাভ্যাস যার লক্ষ্য মস্তিষ্কের সুরক্ষা, আর বাকিরা অনুসরণ করেন তাদের প্রচলিত পশ্চিমা ধাঁচের খাদ্যাভ্যাস।
উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধী খাদ্যাভ্যাসে মূল জোর থাকে লবণ কমিয়ে হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা বাড়ানোয়। অন্যদিকে মাইন্ড খাদ্যাভ্যাসে গুরুত্ব দেওয়া হয় মাছ, সবুজ শাকসবজি ও মস্তিষ্কবান্ধব বেরি জাতীয় ফলের মতো উপাদানে। এই দুই দলের অংশগ্রহণকারীদের প্রতিদিন তাদের সাধারণ গ্রহণ থেকে প্রায় দুইশ পঞ্চাশ ক্যালরি কমাতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি একটি মিষ্টি বার, ছোট কেক বা কয়েকটি সিদ্ধ ডিমের সমপরিমাণ ক্যালরি।
তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় দেখা যায়, যারা অন্তত দশ শতাংশ ওজন কমাতে সক্ষম হয়েছেন তারা অন্যদের তুলনায় উপকারী চর্বি ও রক্তে থাকা চর্বিজাত উপাদানের মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি পেয়েছেন। ক্ষতিকর এলডিএল নামের রক্তচর্বি কমেছে প্রায় আট শতাংশ। উপকারী এইচডিএল চর্বি বেড়েছে বারো শতাংশ। একই সঙ্গে রক্তে থাকা অ্যাডিপোনেকটিন নামের এক গুরুত্বপূর্ণ হরমোনও বেড়ে গেছে। এই হরমোন দেহের প্রদাহ কমায় ও ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, যারা দশ শতাংশ ওজন কমাতে পেরেছেন তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা গড়ে ছয় শতাংশের মতো কমে। অথচ যাদের ওজন কমেনি তারা এই সুবিধা পাননি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোন বিশেষ খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা হয়েছে তা ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলেনি। বরং প্রতিদিন সামান্য ক্যালরি কমিয়ে নিয়মিতভাবে তা বজায় রাখাই মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
গবেষকদের ভাষ্য, বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে ওজন কমা সাধারণত ধীরগতির। কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দেহের উপযোগী খাদ্যপ্রক্রিয়া কমে আসে এবং পেশির শক্তি হ্রাস পায়। তবু মাত্র সামান্য ক্যালরি কমিয়েও এ বয়সে উল্লেখযোগ্য উপকার পাওয়া সম্ভব বলেই গবেষণাটি প্রমাণ করেছে।










