বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক বহুজাতিক বন্দর ও লজিস্টিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্লড। ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে তাদের আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে।
ডিপি ওয়ার্লড বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশে কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত এবং এই খাতে তাদের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ডিপি ওয়ার্ল্ড পরিচালিত পোর্টগুলোতে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের দক্ষতা, টার্ন এরাউন্ড টাইম এবং ঘন্টায় গড় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং পারফরম্যান্সের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে সংস্থাটির কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে তা আরও স্পষ্ট হয়।
শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করে ডিপি ওয়ার্লড। এখানে ২০২৪ সালে প্রায় ৩ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন টিইইউ হ্যান্ডল করা হয়। বন্দরের সূত্র অনুযায়ী, ঘন্টায় প্রায় ১১৫ কন্টেইনার মুভমেন্টের সক্ষমতা রয়েছে। সাধারণত একটি বড় জাহাজ নোঙর করার পর থেকে ছাড়তে সময় লাগে গড়ে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা। ফলে টার্ন এরাউন্ড টাইম দ্রুততম পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়।
ভারতের মুন্দরা পোর্টে ডিপি ওয়ার্ল্ডের পরিচালিত টার্মিনালে ২০২৪ সালে বার্ষিক হ্যান্ডলিং রেকর্ড ছাড়িয়েছে ১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টিইইউ। এখানেও ক্রেন প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৩৩ মুভমেন্ট হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার বন্দরগুলোর মধ্যে অন্যতম উচ্চতর পারফরম্যান্স। এই পোর্টে একটি মাঝারি আকারের কনটেইনার জাহাজের পুরো লোড-আনলোড কার্যক্রম শেষ করতে লাগে প্রায় ২০ ঘণ্টা।
বিশাখাপত্তনম বন্দরের ভিসাখা কন্টেইনার টার্মিনালও পরিচালনা করছে ডিপি ওয়ার্লড। এই টার্মিনালে জাহাজের গড় টার্ন এরাউন্ড টাইম প্রায় ১৭ ঘণ্টা। প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৪ থেকে ২৬ কন্টেইনার মুভমেন্ট সম্ভব হয়। ভারতের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় এখানে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বলে জানা গেছে।
ভিয়েতনামের হাইফং ও কাইমেপ বন্দরে ডিপি ওয়ার্ল্ডের পরিচালনায় থাকা টার্মিনালগুলোতেও দ্রুততার সঙ্গে হ্যান্ডলিং সম্পন্ন হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামে পোর্ট টার্ন এরাউন্ড টাইম সবচেয়ে কম। গড়ে একটি জাহাজের পুরো কার্যক্রম শেষ করতে সময় লাগে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা। এটি একরকম উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রুত মালামাল খালাস ও রফতানি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে।
চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য এনসিটি অপারেটর নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ডিপি ওয়ার্ল্ডের অতীত অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, তারা দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে ন্যায্য ট্যারিফ, স্বচ্ছ অপারেশন ও দেশীয় শ্রমবাজারে প্রভাবসহ একাধিক বিষয় গুরুত্ব পাবে।
ডিপি ওয়ার্ল্ডের কর্মকর্তারা মনে করেন, বাংলাদেশে যদি তারা এনসিটি পরিচালনার সুযোগ পায়, তবে বন্দর পরিচালনায় আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল এবং স্বয়ংক্রিয় হ্যান্ডলিং ব্যবস্থা নিয়ে আসা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানায়নি, তবে আলোচনার গতি ও পরিসর থেকে বোঝা যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার সময় আসন্ন।
👉 আপনার মতামত জানাতে মন্তব্য করুন
👍 পছন্দ হলে লাইক দিন
🔁 বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, জানতে দিন তারাও
চোখ রাখুন businesstoday24.com–এ, আগামী আপডেটের জন্য!