আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ও তা পুনরায় রপ্তানির অভিযোগে ভারতীয় পণ্যের উপর শুল্ক আরও বাড়ানোর হুমকি দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (৪ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “ভারত কেবল বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে না, বরং তারা তা খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রিও করছে। ইউক্রেনের মানুষ মরছে, অথচ তারা এতে কোনও পরোয়া করছে না। এই কারণে, আমি ভারতের পণ্যের উপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।”
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উপর ইতিমধ্যেই ২৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নয়াদিল্লির রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিই এই পদক্ষেপের মূল কারণ।
তবে এই শুল্ক আরোপের একদিন পরই ট্রাম্প ভারতের কিছু তেল কোম্পানির রাশিয়ান তেল না কেনায় প্রশংসা করেছিলেন। হঠাৎ করেই আবার হুমকির সুরে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়ায় মার্কিন রাজনৈতিক মহলেই নানা প্রশ্ন উঠছে।
ভারতের পক্ষ থেকে অবশ্য এই বিষয়ে এখনও কোনও পাল্টা কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, জ্বালানি কেনা একটি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং তা দেশের জাতীয় স্বার্থ, বাজারের পরিস্থিতি এবং দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তার উপর নির্ভর করে। ভারতের তেল কোম্পানিগুলি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেছে—এমন কোনও তথ্য তাদের কাছে নেই বলেও জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৩০ জুলাই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি কেবল বাণিজ্যিক নয়, রাজনৈতিক চাপের কৌশলও হতে পারে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার রাজস্ব প্রবাহ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া। অন্যদিকে ভারত ও চীন রাশিয়ার তেলের প্রধান ক্রেতা, যার ফলে ওয়াশিংটন এই দেশগুলোর উপর চাপ বাড়াতে চাচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, তারা রাশিয়া বা অন্য কোনও দেশের তেল কেনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে না এবং কোনও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে না।
বিশ্ববাজারে রাশিয়ার কমদামে তেল বিক্রির কৌশলের ফলে ভারতীয় রিফাইনারিগুলি লাভবান হলেও তা যে কৌশলগত কারণে আমেরিকার অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা স্পষ্ট ট্রাম্পের সাম্প্রতিক হুঁশিয়ারিতে।