Home আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র বনাম ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি: ট্রাম্প বিতর্কের পাঠ

গণতন্ত্র বনাম ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি: ট্রাম্প বিতর্কের পাঠ

ছবি সংগৃহীত
মোস্তাফা তারেক, নিউইয়র্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। সোমবার তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, হয়তো তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, অন্তত সেই সম্ভাবনা তিনি “খারিজ করেননি।” এ মন্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান স্পষ্টভাবে কোনো প্রেসিডেন্টকে দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার অনুমতি দেয় না।

মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, “কেউ দু’বারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না।” ১৯৫১ সালে অনুমোদিত এই সংশোধনীটি মূলত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের অভিজ্ঞতার পর প্রণীত হয়। রুজভেল্ট মহামন্দা ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যান এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুর কিছুদিন পর মারা যান। এরপর থেকে এই সাংবিধানিক সীমা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ভারসাম্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প যদি তৃতীয় মেয়াদের জন্য আদালতে যাওয়ার উদ্যোগ নেন, তবুও তাঁর পক্ষে জেতা প্রায় অসম্ভব। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক ওয়েইন আঙ্গার বলেন, “সংবিধান খুবই পরিষ্কার-প্রেসিডেন্ট দু’টি চার বছরের মেয়াদেই সীমাবদ্ধ। সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে কোনো ব্যতিক্রম করবে না।”

তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু রিপাবলিকান নেতা এই সাংবিধানিক সীমা পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। টেনেসির কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছর জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন যাতে বলা হয়, কেউ তিনটি ‘অধিবিচ্ছিন্ন নয়’ এমন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। এই প্রস্তাব যদি কখনো আইনে পরিণত হয়, যা বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অত্যন্ত অসম্ভব—তাহলে ট্রাম্প ২০২৯ সালে আবারও প্রার্থী হতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন কংগ্রেসে ও রাজ্য পর্যায়ে সেই সমর্থন পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্প কি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হতে পারেন? ট্রাম্প নিজেই সোমবার সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা করলে মানুষ ভালোভাবে নেবে না, এটা কিছুটা চালাকি মনে হবে।” সংবিধান অনুযায়ীও তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, কারণ ১২তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে: যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনিও ভাইস প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না।

সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের “তৃতীয় মেয়াদ” প্রসঙ্গটি বাস্তবতার চেয়ে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই বেশি দেখা যাচ্ছে। একদিকে এটি তাঁর সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আলোচনা তৈরি করছে, অন্যদিকে মার্কিন গণতন্ত্রের প্রথাগত সীমা ও সাংবিধানিক কাঠামো পুনরায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনছে।

ট্রাম্পের এই বক্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে দুটি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে প্রথমত, সংবিধানের প্রতি রাজনৈতিক শ্রদ্ধা কতটা দৃঢ়; দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা কত সহজে জনপ্রিয়তার তরঙ্গে সেই সীমারেখা স্পর্শ করতে চান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও এতটাই শক্তিশালী যে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা সেখানে সহজে সংবিধানকে অতিক্রম করতে পারবে না। তবু ট্রাম্পের এই বক্তব্য আমেরিকার রাজনৈতিক মেরুকরণের গভীরতা আবারও প্রকাশ করেছে।