বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া: কেউ চলে গেল, কেউ আর ফেরেনি-কুষ্টিয়ার মিরপুরে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুটি জীবন থেমে গেল একসঙ্গে, একসাথে চলার স্বপ্নভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়লো হাসপাতালের বেডে।
মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার আহসান হাবিব তুষার (৩৫) এবং তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু রাব্বি (৩৬)। কয়েক ঘণ্টা আগেও তারা ছিলেন জীবন্ত, হাসিখুশি-বন্ধুত্বের গল্পে ভরা। আর বিকেলেই তাদের নিথর দেহ পড়ে রইল হাসপাতালের নিঃসঙ্গ এক কক্ষে।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিরপুর উপজেলার বিজিবি সেক্টর সংলগ্ন যোগীপুল মসজিদের সামনে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বালু বোঝাই একটি ড্রাম ট্রাক হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। একটির উপর উঠে যায় ভারী যানটি। চারজন আরোহীর মধ্যে তুষার ও রাব্বি ছিলেন এক বাইকে। স্থানীয়রা তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠান।
নিহত তুষারের ভগ্নিপতি তৌহিদ বলেন, ‘‘রাব্বিকে হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই মারা যায়। তুষার তখনও কিছুটা জ্ঞান ছিল। ভাইয়ের চোখে পানি ছিল, সে বলছিল, ‘রাব্বি কই?’ আধা ঘণ্টার মধ্যেই ওরও নিঃশ্বাস থেমে যায়। বন্ধু হারানোর কষ্ট সইতে পারেনি হয়তো।’’
দুই বন্ধুর এমন মৃত্যু শুধু পরিবারের নয়, পুরো এলাকাবাসীর হৃদয় বিদারক এক ক্ষতি। আহসান হাবিব তুষার ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল, এলাকার পরিচিত মুখ। রাব্বিও ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। স্থানীয়রা জানায়, স্কুলজীবন থেকেই একে অপরের সঙ্গে ছায়ার মতো চলেছেন তারা। এই সড়কে শেষ হল তাদের একসঙ্গে পথচলা।
এ ঘটনায় আহত আরও দুইজন এখনো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মিরপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আজম বলেন, ‘‘বিকেলে বালি বোঝাই ড্রাম ট্রাকের সঙ্গে দুটি মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন আহত হন। পরে দুইজন হাসপাতালে মারা যান। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে।’’
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে। অপ্রশিক্ষিত চালক, অতিরিক্ত বালু বোঝাই, ওভারটেকিং—সব মিলিয়ে যেন মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠছে প্রতিদিনকার সড়কে।
তুষার ও রাব্বির পরিবার এখন শুধু একটি প্রশ্ন করছে—এত তাড়াতাড়ি কেন ছিনিয়ে নিলো সড়ক তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানদের? তাদের চোখে জল আর বুকভরা হাহাকার, এই বন্ধুত্বের করুণ পরিণতি যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, রাস্তায় সতর্কতা না থাকলে কী নিদারুণ পরিণতি অপেক্ষা করে।