বেগম জিয়ার শেষ বিদায়ে ভারত-পাকিস্তান সৌজন্য
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে আসা বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে আজ এক বিরল ও তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হয়। ঢাকার রাজকীয় পরিবেশে সৌজন্য বিনিময় করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এবং পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক।
মূল ঘটনাপ্রবাহ: বুধবার সকালে বেগম জিয়ার জানাজা ও শেষ বিদায়ের প্রাক্কালে দুই দেশের প্রতিনিধিরা একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, প্রথাগত কালো পোশাকে সজ্জিত সরদার আয়াজ সাদিক এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর করমর্দন করছেন। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এই দুই উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের এই সৌজন্য বিনিময়কে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
অনুষ্ঠানে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কূটনৈতিক তাৎপর্য: যদিও এটি একটি শোকাবহ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সৌজন্য সাক্ষাৎ, তবুও ঢাকা সফরে ভারত ও পাকিস্তানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের এই সরাসরি কথোপকথন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বার্তা বহন করে। বেগম জিয়ার প্রয়াণে শোক জানাতে এসে দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে এমন সংক্ষিপ্ত কিন্তু আন্তরিক বিনিময় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইতিহাস সাক্ষী দেয়, অনেক সময় বড় বড় রাজনৈতিক সংকট বা অচলাবস্থা কাটানোর সূত্রপাত হয় এ ধরনের বড় শোকানুষ্ঠান বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে। ড. এস জয়শঙ্কর এবং সরদার আয়াজ সাদিকের এই করমর্দন কেবল ব্যক্তিগত সৌজন্য নয়, বরং এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে রুদ্ধ হয়ে থাকা আলোচনার দ্বারে একটি সূক্ষ্ম কড়া নাড়ার সংকেত হতে পারে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিদায় অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রতিনিধিদের এই মিলনস্থল হিসেবে ঢাকা আজ দক্ষিণ এশিয়ার একটি ‘কূটনৈতিক হাব’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাদের একই ছাদের নিচে নিয়ে আসার মাধ্যমে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা পুনরায় প্রমাণিত হলো।
আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বার্তা: সার্ক (SAARC) অঞ্চলের দুই প্রধান শক্তির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কোনো উল্লেখযোগ্য সংলাপ নেই। এমন পরিস্থিতিতে জয়শঙ্কর ও সাদিকের এই খোলামেলা কথোপকথন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বার্তা দিচ্ছে যে, সংকট থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলো অন্তত সৌজন্য বজায় রাখতে আগ্রহী।
ব্যক্তিগত ইমেজের প্রভাব: ছবিতে দেখা যাচ্ছে উভয় নেতা বেশ সাবলীলভাবে কথা বলছেন। এস জয়শঙ্করের মতো ঝানু কূটনীতিবিদ যখন কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিপক্ষের সাথে হাত মেলান, তখন সেটি অনেক সময় পরিকল্পিত ‘আইস ব্রেকিং’ হিসেবে গণ্য করা হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তানের স্পিকারের উপস্থিতি নির্দেশ করে যে তারা ভারতের সাথে সম্পর্কের জড়তা কাটাতে আগ্রহী হতে পারে।
উল্লেখ্য, বার্ধক্যজনিত ও দীর্ঘকালীন অসুস্থতার পর বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বেগম খালেদা জিয়ার প্রয়াণে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এই বিদায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই বিদেশি অতিথিরা এখন ঢাকায় আসেন।










