Home পরিবেশ তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ

তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে আইন শক্তিশালীকরণের তাগিদ

ঢাকা: তামাক বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে একটি প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার এক-তৃতীয়াংশ কমানোর লক্ষ্য অর্জনে তামাক প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭১ শতাংশ ঘটে হৃদরোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগে, যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তামাক চিহ্নিত। প্রতিবছর গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক ব্যবহারজনিত কারণে।

আজ শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী প্রায় ৫ কোটি। এই বিপুল সংখ্যক তরুণকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত একটি শক্তিশালী আইন এবং তার কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

গোলটেবিল বক্তারা বলেন, তামাক শুধু স্বাস্থ্য ঝুঁকি নয়, বরং এটি দারিদ্র্য হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা, টেকসই কৃষি, মানসম্মত শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণসহ এসডিজির প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনে বাধা হিসেবে কাজ করছে। ২০২১ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এফসিটিসি-এর নির্দেশনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশীল করার উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনীর প্রয়োজনীয় সমন্বয় করছে। তবে তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বক্তারা দ্রুত খসড়া সংশোধনী পাসের আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “তামাকের ক্ষতি বহুমাত্রিক। বর্তমান সরকার যেসব রিফর্ম করছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার তা হলে এটি হবে সরকারের একটি সিগনেচার রিফর্ম।”

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক তামাক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, “এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আর আমরা শুনতে চাই না। ভবিষ্যত প্রজন্ম সুরক্ষায় খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাস করা জরুরি।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ছাড়া বিকল্প নেই।”

বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের বলেন, “আইন সংশোধনে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, এটি অব্যাহত রাখতে হবে।”

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “আইন সংশোধনের সাথে রাজস্ব কমার কোনো সম্পর্ক নেই। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাস করা উচিত।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন বলেন, “ই-সিগারেট বা ভেপিং পণ্য তামাকের মতোই ক্ষতিকর, এগুলো সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আত্মা ও প্রজ্ঞার বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। প্রজ্ঞার তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত খসড়া সংশোধনীতে ধূমপানের জন্য পাবলিক প্লেসে নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বাতিল, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ, এবং ই-সিগারেট, ভ্যাপিং ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ সকল ক্ষতিকর পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।