বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: চলতি মে মাসের প্রথম দিকটা ছিল অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক। কিন্তু বৃহস্পতিবারের পর থেকেই দেশের ওপর নেমে এসেছে প্রচণ্ড দাবদাহ। শুক্রবার তা পৌঁছায় অসহনীয় মাত্রায়। রাজধানী থেকে শুরু করে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ সবখানেই সূর্যের খরতাপে দগ্ধ হচ্ছে জনজীবন। সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, যারা রোদে-জলে দিনমান কাজ করেন জীবন বাঁচাতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ স্থানে দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এই দাবদাহ অন্তত রোববার পর্যন্ত স্থায়ী হবে। এরপর সোমবার থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ খন্দকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান তাপপ্রবাহ আজ এবং আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর সোমবার থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।’
শুক্রবার আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বার্তায় জানানো হয়, চলমান তাপপ্রবাহ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের কিছু এলাকায় তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষত রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ইতিমধ্যেই তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে।
রাজশাহীর একটি ইটভাটার শ্রমিক আবদুস সালাম বলেন, “সকালে কাজে নামলেই মাথা ঘুরে ওঠে। পানি খেতে খেতে পেট ভরে যায়, তবু গায়ে গরম কমে না। কাজ না করলে পেট চলবে না, আবার রোদে নামলেও শরীর চলে না।”
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের কৃষক রহিম উদ্দিন জানান, “ধানের জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। রোদে গরম এমন যে, হাতের চামড়া পুড়ে যায়। তবু আমাদের মতো মানুষের কাজ ছাড়া উপায় নেই।”
ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগেও একই অবস্থা। ঢাকার মতিঝিলে ফুটপাথে গামছা মাথায় বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা দিনমজুর মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, “কাজ নেই, খাওয়া নেই। তাও সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি—কোনো মাল আসবে কি না, কেউ ডাকবে কি না। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা।”
সাধারণ মানুষ ঘরে থেকেও স্বস্তি পাচ্ছে না। দিনে বিদ্যুৎ ঘন ঘন চলে যাওয়ার কারণে ফ্যানও চলছে না ঠিকমতো। শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছেন আরও বেশি বিপদে। হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক ও পানিশূন্যতা নিয়ে রোগী বাড়ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজধানীর একটি হাসপাতালের চিকিৎসক জানান, “গত কয়েকদিনে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতা নিয়ে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছেন। অনেকেই সময়মতো পানি পান করছেন না বা ছায়া থেকে দূরে থাকছেন।”
বিশেষজ্ঞরা এ সময় অতিরিক্ত পানি পান, খালি পেটে বাইরে না যাওয়া, হালকা কাপড় পরা এবং রোদ থেকে নিজেকে রক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে সমস্যাটা শুধু পরামর্শে নয়, যাদের ঘরে থাকার উপায় নেই, তাদের কাছে রোদ মানেই লড়াই।
প্রকৃতির এই নিষ্ঠুরতা যত দিন চলবে, তত দিন শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো বাড়তেই থাকবে।