Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য দাসপ্রথা: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্ধকার শিকড়

দাসপ্রথা: ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্ধকার শিকড়

ছবি: এ আই
 আমিরুল মোমেনিন:  ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাস একদিকে যেমন গর্বিত সামরিক বিজয়ের কাহিনি তুলে ধরে, অন্যদিকে এর গোপন ভাঁজে লুকিয়ে আছে লাখো নির্যাতিত মানুষের রক্ত, কান্না ও শিকলের আর্তনাদ। দাসপ্রথা তার অন্যতম নির্মম অধ্যায়। আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে কোটি কোটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে জোরপূর্বক ধরে এনে বেঁধে রাখা হতো ইউরোপ ও আমেরিকার খামার, খনি কিংবা অভিজাত বাড়িগুলোতে। এই নিষ্ঠুর বাণিজ্যের অন্যতম কুশীলব ছিল ব্রিটেন।

দাস বাণিজ্যের পেছনে ছিল এক ত্রিমুখী অর্থনৈতিক চক্র, যাকে ইতিহাসে বলা হয় ‘ট্রায়াঙ্গুলার ট্রেড’। প্রথমে ব্রিটেন থেকে কাপড়, আগ্নেয়াস্ত্র ও নানা পণ্য পাঠানো হতো পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে। স্থানীয় রাজা বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এই পণ্যের বিনিময়ে ধরে নেওয়া হতো মানুষ জীবিত মানুষ! তারপর এই মানুষদের গাদাগাদি করে জাহাজে তোলা হতো, যেখানে না খেতে পেয়ে, অসুস্থতায় কিংবা চরম অবমাননায় অনেকেই মাঝসাগরে মারা যেতেন। যারা বেঁচে থাকতেন, তারা পৌঁছাতেন ক্যারিবীয় দ্বীপ বা আমেরিকার উপকূলে। সেখানে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হতো চিনির খামারে, তুলা চাষে কিংবা গৃহপরিচারক হিসেবে। আর সেই খামারের উৎপাদিত চিনি, কফি, তামাক আবার ফিরে যেত ব্রিটেনে।

এই নৃশংস চক্র থেকে ব্রিটেনের বন্দরশহরগুলো যেমন লিভারপুল ও ব্রিস্টল অঢেল সম্পদ অর্জন করে। শত শত বিল্ডিং, বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি ব্যাংক এই দাসবাণিজ্যের টাকায় দাঁড়িয়ে গেছে। একদিকে যেমন শ্বেতাঙ্গ বণিকেরা ধনী হচ্ছিল, অন্যদিকে দাসেরা প্রতিদিন হারাচ্ছিল মানবাধিকার, পরিবার, এমনকি জীবনের শেষ আশ্রয়টুকুও।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও এই প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের লবণ, চা ও আফিম ব্যবসার মুনাফা একদিকে ইংরেজ সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করছিল, অন্যদিকে দাসপ্রথার মতো সামাজিক অমানবিক ব্যবস্থাকেও টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করেছিল।

কিছু সময় পেরিয়ে গেলে ইতিহাস নীরব হয়। কিন্তু দাসদের কান্না আজও শুনতে পাওয়া যায় লন্ডনের সংগ্রহশালায়, ব্রিস্টলের নদীপাড়ে কিংবা ক্যারিবীয়দের লোকগানে। এই ইতিহাসকে আড়াল করলে শুধু ইতিহাসকেই নয়, মানবতাকেও অবজ্ঞা করা হয়।


👉 ইতিহাসের এই অন্ধকার অধ্যায় কীভাবে আজকের সমাজকে গড়ে তুলেছে জানতে চোখ রাখুন আমাদের ধারাবাহিক সিরিজে। পরবর্তী পর্বে উঠে আসবে দাসদের মৃত্যুর পরও লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়াবহ কাহিনি।

📢 শেয়ার করুন, জানুন, প্রশ্ন তুলুন—কারণ ইতিহাস মুখ ফিরিয়ে থাকলে ভবিষ্যৎ অন্ধ হয়ে যায়।