আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের উত্তরপ্রদেশে এক নববধূ মধুচন্দ্রিমার সময়েই নিজের স্বামীকে খুন করিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে জানা গেছে, ওই হত্যাকাণ্ডে ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেছে নববধূর প্রেমিক। বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ি জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড গোটা দেশকে স্তম্ভিত করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল জেলার একটি পর্যটন এলাকায়। নিহত স্বামীর নাম অনুরাগ আগরওয়াল, বয়স ৩০, পেশায় ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি কয়েক মাস আগেই অরণ্যা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমার উদ্দেশ্যে তাঁরা উত্তরাখণ্ডে যান।
তদন্তে উঠে এসেছে, অরণ্যার আগে থেকেই এক প্রেমিক ছিল নাম নিশান্ত। বিয়ের পরও তাদের সম্পর্ক ছিল অব্যাহত। এমনকি, বিয়েতে রাজি না হলেও পারিবারিক চাপে পড়ে অরণ্যা অনুরাগকে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে মেনে নিতে পারেননি কেউই।
পুলিশ জানায়, অরণ্যা পরিকল্পনা করেই অনুরাগকে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যান। সেখানেই নিশান্ত ও তার দুই বন্ধুকে ডেকে নিয়ে আসেন। তারা আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। মধুচন্দ্রিমার দ্বিতীয় রাতে অনুরাগকে পাহাড়ি রাস্তায় একা হাঁটাতে নিয়ে যান অরণ্যা। কিছুদূর যেতেই নিশান্ত ও তার সহযোগীরা এসে অনুরাগকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে এবং দেহ নিচু খাদে ফেলে দেয়।
খুনের পর অরণ্যা পুলিশকে জানায় যে, অনুরাগ নিখোঁজ হয়েছেন। প্রথমে পুলিশ অপহরণ ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখলেও একাধিক অসঙ্গতি ধরা পড়ে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল কল রেকর্ড এবং হোটেলের কর্মীদের জবানবন্দি থেকে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
শেষ পর্যন্ত অরণ্যার মোবাইল ট্র্যাক করে দেখা যায়, ঘটনার দিন নিশান্তের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। জেরা শুরু করলে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ভেঙে পড়ে অরণ্যা সব স্বীকার করেন। জানান, তিনি নিজের স্বামীকে ভালোবাসতেন না এবং প্রেমিক নিশান্তের সঙ্গেই সংসার করতে চেয়েছিলেন।
এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই অরণ্যা, নিশান্ত এবং আরও দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে খুন ও ষড়যন্ত্রের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এ ধরনের ‘ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত খুন’কে ভয়ংকর মানসিক বিকার বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কেবল প্রেম বা পরকীয়ার বিষয় নয়, বরং এটি একটি গভীর সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি—যেখানে সম্পর্ক, প্রতিশ্রুতি ও মূল্যবোধ সবকিছুই ভেঙে পড়ছে।