হেলথ ডেস্ক
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের তালিকায় গরু ও ছাগলের নলার ঝোল এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঈদ-উল-আযহার পরে হাড়, নলা, অস্থি এসব দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের ঝোল, যাকে অনেকে বলেন “হাড়ের সূপ” বা “ব্রথ”। কেউ বলেন, এটি ক্যালসিয়ামের ভাণ্ডার, আবার কেউ সতর্ক করেন এর অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরল নিয়ে। তাহলে কোনটা সত্যি? নলার ঝোল আসলে উপকারী না ক্ষতিকর?
পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, পশুর অস্থি, মজ্জা ও জোড়ার অংশে রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান। নলা বা হাড় থেকে দীর্ঘ সময় ধরে সিদ্ধ করে তৈরি করা ঝোলে পাওয়া যায়:
- ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেশিয়াম, যা হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক
- কোলাজেন নামক প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা ত্বক, চুল ও জয়েন্টের জন্য উপকারী
- জেলাটিন, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে
- গ্লুকোজামিন ও কনড্রয়েটিন, যা জোড়ার ব্যথা উপশমে সাহায্য করতে পারে
বিশেষ করে বয়স্ক, হাড়ক্ষয়জনিত রোগে আক্রান্ত এবং শিশুদের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতকৃত নলার ঝোল হতে পারে প্রাকৃতিক পুষ্টি উৎস।
চর্বি ও স্বাস্থ্যঝুঁকি
তবে নলার ঝোল খাওয়ার সময় চোখ বন্ধ করে উপকারী ভাবার সুযোগ নেই। কারণ:
- গরু বা ছাগলের হাড়ে থাকা মজ্জা (Bone marrow) উচ্চমাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা স্যাচুরেটেড চর্বিতে ভরপুর
- অতিরিক্ত মজ্জা ও চর্বিযুক্ত অংশ রান্না করলে ঝোলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায়
- হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্থূলতার ঝুঁকি থাকে নিয়মিত অতিরিক্ত খেলে
- ডায়াবেটিস বা লিভারের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি হতে পারে হুমকির বিষয়
বিশেষজ্ঞদের মত, যদি হাড় ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা হয় এবং চর্বি আলাদা করে রান্না করা হয়, তাহলে ঝোলটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ হয়। উপরন্তু, দীর্ঘ সময় সিদ্ধ করলে পুষ্টি বের হয় ঠিকই, তবে চর্বিও মিশে যায়—যা পরিমিতি ছাড়া গ্রহণ করলে ক্ষতি করতে পারে।
পরামর্শ
- প্রতিদিন নয়, মাঝেমধ্যে খাওয়া ভালো
- বেশি চর্বিযুক্ত অংশ বাদ দিয়ে রান্না করুন
- শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য হালকা ঝোল আলাদা করে দিন
- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও কিডনি রোগীদের নলার ঝোল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি
গরু বা ছাগলের নলা থেকে তৈরি ঝোল, সঠিকভাবে প্রস্তুত ও পরিমিত পরিমাণে খেলে হতে পারে একটি প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের উৎস। তবে এতে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ও কোলেস্টেরলের দিক বিবেচনা না করলে তা উপকারের বদলে ক্ষতিও করতে পারে। তাই নলার ঝোল উপভোগ করুন সচেতনভাবে।