হেলথ ডেস্ক:
নারকেল নিয়ে ডায়াবেটিস রোগীদের মাঝে নানা রকম ধারণা প্রচলিত। অনেকের বিশ্বাস, ডায়াবেটিস হলে নারকেলসহ কিছু ফল খাওয়া ঠিক নয়, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু নারকেলের নরম শাঁস খেলে কি সত্যিই রক্তে চিনির মাত্রা চট করে বাড়ে? এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একজন ভারতীয় সমাজমাধ্যম প্রভাবী করণ সারিন নিজের শরীরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।
করন সারিন ৫০ গ্রাম নারকেল খাওয়ার পর গ্লুকোজ মনিটরিং করেছেন দু’ঘণ্টা ধরে। পরীক্ষার পর দেখা যায়, নারকেল খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রায় কোনো উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি হয়নি। এই তথ্য তিনি ইনস্টাগ্রামে নিজের অনুসারীদের জানান।
তাহলে, সমাজমাধ্যম প্রভাবীর এই পরীক্ষাটি কি বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিযুক্ত? ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাধারণত যেসব খাবারে দ্রুত শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, সেগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো। কিন্তু যেসব খাবারের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, সেগুলো নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ডায়াবেটিস রোগীরা নারকেল খেতে পারেন, এটি ক্ষতিকর নয়। তবে খাওয়ার পরিমাণ মেপে নেওয়া প্রয়োজন।’’
নারকেলের পুষ্টিগুণ ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স:
১০০ গ্রাম নারকেলে প্রায় ৩৫০ থেকে ৩৭০ ক্যালোরি থাকে। এতে থাকে ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৯ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার, ৩৩ গ্রাম চর্বি এবং ৩ গ্রাম প্রোটিন। নারকেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫১, যা ‘লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না।
পঞ্জাবের পুষ্টিবিদ গরিমা গয়াল জানাচ্ছেন, ‘‘নারকেলের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে শরীরে শর্করার প্রবাহ ধীরে ধীরে হয়। এতে শরীরে ইনসুলিন ছাড়াই শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।’’ নারকেলের ফাইবার কার্বোহাইড্রেটের শোষণ ধীরগতিতে করে, ফলে রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ে না।
কতটা নারকেল খাওয়া উচিত?
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এমন খাবারই উপকারী যা কার্বোহাইড্রেট ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা কম থাকে। নারকেল এই দিক থেকে উপযোগী, তবে ক্যালোরি বেশি থাকার কারণে পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ডায়াবেটিস রোগী ১০০ গ্রাম আপেল খেতে পারেন, কিন্তু একই পরিমাণ নারকেল খাওয়া ঠিক হবে না। ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে দিনে ৩০ গ্রাম নারকেল খাওয়া যেতে পারে।’’
সুতরাং, ডায়াবেটিস থাকলেও নারকেলের নরম শাঁস মাপমত খাওয়া যেতে পারে এবং তা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। তবে খাওয়ার পরিমাণ যেন বেশি না হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন