Home Second Lead নেপালের অগ্নিগর্ভ প্রজন্মবিস্ফোরণ: গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি

নেপালের অগ্নিগর্ভ প্রজন্মবিস্ফোরণ: গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি

রামেশ ভট্টরায়, কাঠমান্ডু: নেপালে সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভকে কেবল সমাজমাধ্যমে আলোচিত তথাকথিত “নেপো কিডস”-এর বিলাসী জীবনযাপনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখলে ভুল হবে। এর পেছনে জমাট বাঁধা ক্ষোভ, দীর্ঘ দিনের ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থাহীনতাই প্রকৃত ইন্ধন।

১. প্রজন্মগত অসাম্য ও হতাশা

বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক বৈষম্য ও সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে যখন সাধারণ নেপালি তরুণদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে, তখন রাজনৈতিক নেতাদের সন্তানদের ইনস্টাগ্রামে ছড়ানো গুচি ব্যাগ, বিলাসবহুল ভ্রমণ বা দামি গাড়ির ছবি হয়ে উঠেছে রাগের প্রতীক। তবে আসল ক্ষোভটি কেবল বৈভব প্রদর্শনের বিরুদ্ধে নয়, বরং সুযোগ-সুবিধার অসম বণ্টনের বিরুদ্ধে।

২. রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভাঙন

নেপালের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে শুরু করে নেপালি কংগ্রেস—সব প্রধান ধারার দলই দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং দায়হীনতার অভিযোগে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। সমাজতান্ত্রিক বা বিপ্লবী অতীত থাকা সত্ত্বেও, প্রচণ্ডের মতো নেতার পরিবারও বিলাসী ভোগবাদে জড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থার শেষ অবলম্বনটিও ভেঙে গেছে।

৩. বিদেশে শ্রম বিক্রি বনাম দেশে বৈভব

প্রতি বছর হাজার হাজার তরুণ নেপাল ত্যাগ করে। কেউ মধ্যপ্রাচ্যের নির্মাণশ্রমিক, কেউ আবার ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ভাড়াটে সৈনিক। অনেকেই কফিনে ফিরে আসেন। অন্যদিকে দেশে রয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিবারের তরুণ প্রজন্ম সোনার চামচ মুখে নিয়ে সুযোগ ভোগ করছে। এই বৈপরীত্য বিক্ষোভকে আরও তীব্র করেছে।

৪. ডিজিটাল যুগের আগুন

নেপালের সরকার যখন সমাজমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তখন সেটি উল্টোদিকে আন্দোলনের অনুঘটক হয়ে ওঠে। ফেসবুক, রেডিট, ইনস্টাগ্রাম—যে প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল, সেখানেই শুরু হয় ‘ডিজিটাল বিদ্রোহ’। এর ফলেই আন্দোলন এত দ্রুত রাস্তায় নেমে আসে।

৫. আগুনে পুড়ে যাওয়া সংসদ শুধু প্রতীক

রাজনৈতিক ভবন ভাঙচুর, মন্ত্রীদের বাড়ি আগুনে পুড়ে যাওয়া বা ১৯ তরুণের প্রাণহানি—এসব নিছক সহিংসতার গল্প নয়। এগুলো প্রতীক, যে প্রতীকে ফুটে উঠেছে প্রজন্মের হতাশা ও ক্ষোভ। তরুণরা বিশ্বাস হারিয়েছে রাষ্ট্রের প্রতি, হারিয়েছে নেতৃত্বের প্রতি আস্থা।

বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি:

এই গণবিক্ষোভ আসলে এক ধরনের জেনারেশনাল ওয়েক-আপ কল

এটি কেবল রাজনৈতিক পরিবারগুলির সন্তানদের দায়ী করার প্রশ্ন নয়, বরং একটি গোটা ব্যবস্থার ব্যর্থতার ফল।

বিলাসী জীবনযাত্রা শুধু ক্ষোভের দৃশ্যমান রূপ, কিন্তু সমস্যার মূল হলো দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতা

নেপালের তরুণ প্রজন্ম রাষ্ট্রের প্রতি যে আস্থা হারিয়েছে, সেটি পুনর্গঠন না করা গেলে পরবর্তী দশক আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে।