আর্থিক সংকট ও ভোক্তার আস্থা হ্রাস
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: বিশ্বের শীর্ষ খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক নেস্লের প্রধান নির্বাহী লরঁ ফ্রেইক্সেকে হঠাৎ করেই বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি। এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে তাঁর এক নারী অধস্তন কর্মীর সঙ্গে “অপ্রকাশিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক” থাকার তথ্য সামনে আসার পর সোমবার রাতে এ সিদ্ধান্ত জানায় কোম্পানি।
ফ্রেইক্সে প্রায় চার দশক ধরে নেস্লে’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং গত বছর প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর কোম্পানির মন্দা কাটিয়ে নতুন কৌশলগত অবস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায়ই কেলেঙ্কারির কারণে তাঁকে বিদায় নিতে হলো।
অভ্যন্তরীণ অভিযোগ ও তদন্ত
ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, নেস্লের হুইসেলব্লোয়িং সিস্টেমে অভিযোগ ওঠার পর একটি বহিরাগত আইনজীবী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তদন্ত চালানো হয়। সুইস সংবাদপত্র ব্লিক জানিয়েছে, ফ্রেইক্সে ২০২২ সালে কোম্পানির সদরদপ্তরে ওই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে পরিচিত হন। ২০২৩ সালে তিনি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পদোন্নতিও দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে বর্তমানে ওই নারী নেস্লে’র সঙ্গে যুক্ত নন।
ফ্রেইক্সে আগে তাঁর স্ত্রী আগাতা বালসেরোভস্কার সঙ্গেও নেস্লে’তে কাজ করার সময় পরিচিত হয়েছিলেন। আগাতা পরে কোম্পানি ছেড়ে চলে যান এবং বর্তমানে একটি বৈশ্বিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
উত্তরসূরি নিয়োগ
কেলেঙ্কারির পরপরই নেস্লে কোম্পানির নতুন প্রধান নির্বাহী হিসেবে নিযুক্ত করেছে দীর্ঘদিনের কর্মকর্তা ফিলিপ নাভরাতিলকে। তিনি পূর্বে কোম্পানির নেসপ্রেসো কফি ব্যবসার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, নেস্লের পুনরুত্থান পরিকল্পনা অব্যাহত রাখবেন।
আর্থিক সংকট ও ভোক্তার আস্থা হ্রাস
কোভিড মহামারির সময় রেকর্ড বিক্রি হলেও ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে নেস্লে’র শেয়ারমূল্য ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। উৎপাদন খরচ, জ্বালানি ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির চাপ মোকাবিলায় কোম্পানি একের পর এক দাম বাড়িয়েছে। ফলে ভোক্তারা সস্তা ব্র্যান্ড বা সুপারশপের নিজস্ব পণ্যের দিকে ঝুঁকেছেন।
একই সঙ্গে ‘শ্রিংকফ্লেশন’-এর কারণে ভোক্তার ক্ষোভও বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় কোয়ালিটি স্ট্রিট চকোলেটের বাক্স ২০২২ সালে ৬৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রামে এবং এ বছর আবারও কমে ৫৫০ গ্রামে নামিয়ে আনা হয়েছে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বৈশ্বিক চাপ
স্থূলতা ও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি নেস্লের জন্য আরেক বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র বড় খাদ্য কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অন্যদিকে ব্রিটেনে বিনিয়োগকারীরা কম অস্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদনের জন্য কোম্পানিকে চাপ দিচ্ছেন।
নতুন প্রধান নির্বাহীর সামনে চ্যালেঞ্জ
নাভরাতিলকে এখন একদিকে মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করতে হবে, অন্যদিকে ভোক্তাদের আস্থা ফেরাতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, কোম্পানিকে হয়তো ব্যবসার কিছু অংশ বিক্রি বা পুনর্গঠন করতে হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ক্রমবর্ধমান খরচ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক বিতর্কের মাঝেও ব্র্যান্ডগুলোর প্রতি ভোক্তার আস্থা টিকিয়ে রাখা।