Home First Lead পদার্থে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী

পদার্থে নোবেল পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী — জন ক্লার্ক, মাইকেল এইচ. ডেভোরাট এবং জন এম. মার্টিনিস। বৈদ্যুতিক বর্তনীতে ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল টানেলিং এবং এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন সংক্রান্ত যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তাদের এই পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে। একাডেমি জানিয়েছে, তিন বিজ্ঞানীর আবিষ্কার কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যায় এমন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার, সুপারকন্ডাক্টিং ডিভাইস, এমনকি নির্ভুল কোয়ান্টাম সেন্সর তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

🔬 তাঁদের গবেষণার পটভূমি

জন ক্লার্ক, মাইকেল এইচ. ডেভোরাট এবং জন এম. মার্টিনিস তিনজনই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এবং বহু বছর ধরে কোয়ান্টাম ইলেকট্রনিক্স, সুপারকন্ডাক্টিং সার্কিট ও কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট) নিয়ে কাজ করে আসছেন।

জন ক্লার্ক (John Clarke) ১৯৭০-এর দশকে সুপারকন্ডাক্টিং কোয়ান্টাম ইন্টারফেরেন্স ডিভাইস (SQUID) নিয়ে গবেষণার পথিকৃৎ ছিলেন, যা অতিক্ষুদ্র চৌম্বক ক্ষেত্র পরিমাপে ব্যবহৃত হয়।

মাইকেল এইচ. ডেভোরাট (Michael H. Devoret) কোয়ান্টাম সার্কিটে শক্তি বিনিময় ও কোয়ান্টাম টানেলিংয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করেছেন, যা কোয়ান্টাম বিটের স্থিতিশীলতা বুঝতে সহায়তা করেছে।

জন এম. মার্টিনিস (John M. Martinis) প্রথমবারের মতো বড় আকারের কোয়ান্টাম সার্কিটে এনার্জি কোয়ান্টাইজেশন সফলভাবে প্রদর্শন করেন এবং গুগলের কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রোগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তাদের গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, কোয়ান্টাম ঘটনাগুলো শুধু পরমাণু বা ক্ষুদ্র কণায় সীমাবদ্ধ নয়; সেগুলো বৃহদাকারের বৈদ্যুতিক বর্তনীতেও দেখা যেতে পারে — যা ম্যাক্রোস্কোপিক কোয়ান্টাম ফেনোমেনন হিসেবে পরিচিত।

🏅 নোবেল পুরস্কারের ঐতিহ্য

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কারটির যাত্রা শুরু হয় ১৯০১ সালে। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল, যিনি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কারের জন্য পরিচিত, মৃত্যুর আগে উইলে উল্লেখ করেন— তার সম্পদের আয় থেকে প্রতি বছর পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তি—এই পাঁচ খাতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হবে। পরে ১৯৬৯ সালে এতে যুক্ত হয় অর্থনীতি খাত।

প্রতি বছর নোবেল বিজয়ীরা ডিসেম্বরের ১০ তারিখে, আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে, সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পুরস্কার গ্রহণ করেন। প্রতিটি পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রায় ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনা (প্রায় ৯ লক্ষ মার্কিন ডলার)।

🌍 বৈজ্ঞানিক মহলের প্রতিক্রিয়া

বিজয়ীদের ঘোষণার পর বিজ্ঞানীরা একে “কোয়ান্টাম প্রযুক্তির নতুন যুগের ভিত্তি” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এক বিবৃতিতে বলেন, “এই তিন অধ্যাপকের আবিষ্কার শুধু তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অগ্রগতি নয়, বরং আগামী প্রজন্মের কোয়ান্টাম প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগের মূল চাবিকাঠি।”

নোবেল কমিটি মনে করছে, তাদের কাজের ফলাফল আগামী কয়েক দশকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা ও নির্ভুলতা বৃদ্ধিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে।