মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: ইসলাম ধর্মে সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে শুক্রবার বা জুমার দিন বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতের অধিকারী। কোরআন ও হাদিসে এ দিনের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর কাছে এই দিনকে বলা হয় ‘সপ্তাহের সেরা দিন’।
কোরআনে জুমার গুরুত্ব
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআনে সূরা জুমায় ইরশাদ করেছেন:
“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।”
(সূরা জুমা: ৯)
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ ইবাদত, যা একত্রিত হয়ে জামাতে আদায় করতে হবে।
হাদিসে জুমার ফজিলত
রাসুলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন:
“সূর্য উদিত হওয়ার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হলো শুক্রবার। এ দিন আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিনই তাকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আবার এ দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।” (সহিহ মুসলিম)
অন্য এক হাদিসে এসেছে: “জুমার দিনে তোমাদের ওপর দরুদ পাঠ বেশি করো, কারণ এই দিনে তোমাদের দরুদ আমার নিকট পেশ করা হয়।” (আবু দাউদ)
জুমার দিনের বিশেষ আমল
১. গোসল করা – জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত।
২. পবিত্র পোশাক পরিধান করা – পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব।
৩. সূরা কাহফ পাঠ করা – হাদিসে এসেছে, জুমার দিনে সূরা কাহফ পাঠ করলে এক সপ্তাহ পর্যন্ত নূর প্রদান করা হয়।
৪. দরুদ শরীফ পাঠ – নবী করিম ﷺ এর ওপর অধিক পরিমাণ দরুদ পাঠ করা।
৫. দুয়া করা – জুমার দিনে এমন একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে যখন মুমিনের করা দুয়া অবশ্যই কবুল হয়।
জুমার নামাজের গুরুত্ব
জুমার নামাজ মুসলমানদের জন্য সাপ্তাহিক এক বিশাল সম্মিলন। এখানে খুতবা প্রদান করা হয়, যা মুসলমানদের দীনী ও দুনিয়াবি জীবনে দিকনির্দেশনা দেয়। এ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া গুনাহে কবীরা।
রাসুল ﷺ ইরশাদ করেছেন:
“যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিনবার জুমার নামাজ ছেড়ে দেয়, তার অন্তরে আল্লাহ মুहर লাগিয়ে দেন।” (আবু দাউদ)
উপসংহার
পবিত্র জুমার দিন কেবল সাপ্তাহিক ইবাদতের দিন নয়, বরং এটি মুসলিম ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও তাকওয়ার প্রতীক। এ দিনে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করা, বেশি বেশি ইবাদতে মনোনিবেশ করা, দরুদ ও জিকিরে ব্যস্ত থাকা এবং জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুমার দিনের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।