Home Third Lead পাকিস্তানের প্রাণহানি, ভারতের অর্থনীতিতে ঝড়

পাকিস্তানের প্রাণহানি, ভারতের অর্থনীতিতে ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

 ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঘটে যাওয়া সীমান্ত সংঘাত কেবল সামরিক নয়, মানবিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে এনেছে। এ সংঘাতের প্রতিটি পর্বে দুই দেশই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে ক্ষতির ধরণ ও গভীরতা কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন।

প্রাণহানি ও সামরিক ক্ষয়ক্ষতি: পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় বিমান ও গোলাবর্ষণে পাকিস্তানের বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারান এবং অন্তত ৫৭ জন আহত হন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীর অঞ্চল।

অন্যদিকে ভারত দাবি করেছে, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় তাদের ১৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও ছিল। আহত হয়েছেন আরও ৪৩ জন। ভারতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি ড্রোন হামলায় সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র আংশিকভাবে ধ্বংস হয়।

সামরিক দিক থেকে পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের অন্তত ৫টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং একটি ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করেছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এ দাবির আনুষ্ঠানিক সত্যতা স্বীকার করা হয়নি, তথাপি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে—“কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং মূল্যায়ন চলছে।” পাকিস্তানও নিজের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যাগত তথ্য প্রকাশ করেনি।

অর্থনৈতিক ক্ষতি: এই যুদ্ধের সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পড়ে অর্থনীতিতে। ভারতের স্টক মার্কেটে একদিনেই প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার মূলধন হ্রাস পায়, যা ২০২০ সালের করোনা-পরবর্তী পতনের পর সর্বোচ্চ ক্ষতির রেকর্ড। বিশেষজ্ঞদের মতে, বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে প্যানিক সেলিং শুরু হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ব্যাপকভাবে শেয়ার বিক্রি করে দেন।

পাকিস্তানের অর্থনীতি এমনিতেই সংকটাপন্ন অবস্থায় ছিল। সংঘাত শুরুর পর পাকিস্তানি রুপির মান ডলারের বিপরীতে আরও নিচে নেমে যায়। সীমান্ত এলাকার কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প কার্যত অচল হয়ে পড়ে। আমদানি-রপ্তানির ওপর চাপ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং বিদেশি সহায়তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সব মিলিয়ে পাকিস্তানের অর্থনীতি বড়সড় ধাক্কা খায়।

কৌশলগত ও রাজনৈতিক ক্ষতি: সংঘাতের ফলে দুই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জাতীয়তাবাদী মনোভাব জোরালো হলেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমালোচনার মুখে পড়েছে উভয় দেশ। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানায়। ভারতের দিকে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো তুলনামূলক সহানুভূতিশীল হলেও, পাকিস্তানকেও চীনের কূটনৈতিক সহায়তা পাওয়া গেছে। তবুও, এ সংঘাত দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরও জটিল করে তুলেছে।

উপসংহার: এই সামরিক উত্তেজনার ক্ষতির পরিমাণ সংখ্যায় মাপা সম্ভব হলেও, এর মনস্তাত্ত্বিক ও কূটনৈতিক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। ভারত একদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির শিকার হলেও সামরিকভাবে তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত থেকেছে। পাকিস্তান প্রাণহানি ও পরিকাঠামোগত ক্ষতির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে চরম চাপের মুখে পড়েছে।

এই সংকট আবারও মনে করিয়ে দেয় দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা এখনো কতটা নাজুক। যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সংলাপই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।