Home অন্যান্য রাস্তায় ‘নীরব বিপ্লব’: প্রথা ভেঙে স্কুটার হাতে পাকিস্তানি নারীরা

রাস্তায় ‘নীরব বিপ্লব’: প্রথা ভেঙে স্কুটার হাতে পাকিস্তানি নারীরা

সংগৃহীত ছবি
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: পাকিস্তানের রাস্তায় গাড়ির চেয়ে মোটরসাইকেলের আধিপত্য অনেক বেশি। কিন্তু সেই ভিড়ে একজন নারীকে বাইক বা স্কুটার চালাতে দেখা আজও এক বিরল দৃশ্য। বিশেষ করে রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত পেশোয়ার শহরে এটি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা। তবে সব বাধা আর সামাজিক জড়তা কাটিয়ে সেখানে এক ‘নীরব বিপ্লব’ শুরু করেছেন সাবা ও হুমার মতো অদম্য কিছু নারী।

সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার সাবা যখন প্রথম পেশোয়ারের রাস্তায় স্কুটার নিয়ে বের হন, সাধারণ মানুষের চোখেমুখে ছিল বিস্ময়। সাবা জানান, “পরিবারের সমর্থন আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল মানুষের অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজের পথে ফোকাস করতে।” তার মতে, স্কুটার চালানো কোনো অশালীনতা নয়, বরং এটি আত্মনির্ভরশীলতার প্রতীক।

গ্যালাপ পাকিস্তান ও পাকিস্তান অটোমোটিভ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (PAMA) তথ্যমতে, ২০০৭ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পাকিস্তানে ২০.৪ মিলিয়নেরও বেশি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। দুই চাকার যানবাহনের বাজারে পাকিস্তান এখন বিশ্বে নবম।

ছবি সংগৃহীত

এত বিপুল সংখ্যক বাইক থাকলেও নারীদের অংশগ্রহণ নগণ্য। ২০২৩ সালের ডিজিটাল আদমশুমারি অনুযায়ী, পেশোয়ারের ৪৭ লাখ জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশই নারী। অথচ ২০২৫ সালের ট্রাফিক পুলিশের তথ্য বলছে, পুরো শহরে মাত্র ১,৯৩১ জন নারীর

পাকিস্তানি সমাজে নারীদের বাইকে চড়ার ক্ষেত্রে কিছু অলিখিত কিন্তু কঠোর নিয়ম রয়েছে। যেমন—একজন নারী সাধারণত চালকের আসনে বসেন না এবং পুরুষ চালকের পেছনে দুই পা একদিকে দিয়ে (side-saddle) বসেন। এই প্রথা ভেঙে চালকের আসনে বসাটাকেই অনেকে ‘শালীনতার লঙ্ঘন’ বলে মনে করেন।

তবে সমাজবিজ্ঞানী ড. জাফর খান মনে করেন, নারীদের ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারের ফলে পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোয় তাদের পরনির্ভরশীলতা কমবে। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনেক মেয়েকে স্কুটারে আসতে দেখি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে পরিবর্তন আসছে।”

পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হুমা ২০২০ সাল থেকে বাইক চালাচ্ছেন। তার এই যাত্রায় মূল সাহস জুগিয়েছেন তার বাবা। হুমা বলেন, “পরিবার পাশে থাকলে কেউ কিছু বলতে পারে না। বাইক আমার জীবন সহজ করে দিয়েছে, এখন আর কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না।”

পেশোয়ার ভিত্তিক সাংবাদিক জামাইমা আফ্রিদি বলেন, “যেকোনো নতুন বিষয় শুরুতে চ্যালেঞ্জিং হয়। অনেকে বলবে আমরা সংস্কৃতি নষ্ট করছি। কিন্তু যখন অনেক নারী রাস্তায় নামবেন, তখন এটি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

সাবা, হুমা বা জামাইমাদের মতো নারীরা এখন আর কেবল যাতায়াতকারী নন, তারা পেশোয়ারের রাস্তায় পরিবর্তনের অগ্রদূত। সাবার ভাষায়, “আমার পেশোয়ার চমৎকার একটি শহর, আর এটি মেয়েদের জন্য দিন দিন আরও ভালো হয়ে উঠছে।”