বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে আবারও রেকর্ড পরিমাণ দান জমা পড়েছে। সাড়ে চার মাস পর শনিবার (৩০ আগস্ট) খোলা হয় মসজিদের ১৩টি দানবাক্স। সেখানে পাওয়া গেছে ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা নগদ অর্থ। এছাড়াও মিলেছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার।
সকালে দানবাক্সগুলো খোলার পর বস্তায় ভরে দোতলায় নেওয়া হয়। পরে আড়াই শতাধিক মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে গণনা শুরু হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাগলা মসজিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে প্রায় শত কোটি টাকা জমা আছে। ইতোমধ্যেই এ অর্থ দিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি গরিব রোগীদের চিকিৎসার খরচও বহন করা হচ্ছে এই তহবিলের লভ্যাংশ থেকে।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, “জটিল রোগে আক্রান্ত জেলার দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা ও মসজিদ ব্যবস্থাপনায় এই অর্থ ব্যয় করা হয়।”
ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, পাগলা মসজিদে মানত করলে রোগমুক্তি ও মনোবাসনা পূরণ হয়। এজন্য মুসলিমসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা এখানে দান করেন টাকা, অলঙ্কার, এমনকি হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুও।
জনশ্রুতি রয়েছে, আড়াইশ বছর আগে খরস্রোতা নরসুন্দা নদীতে ভেসে আসেন এক আধ্যাত্মিক সাধক। তাঁর সমাধির পাশেই মসজিদটি গড়ে ওঠে। প্রথমদিকে একটি ছোট্ট চৌচালা ঘর ছিল, পরে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় ধাপে ধাপে বড় আকারের মসজিদ নির্মিত হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মসজিদটি ছিল নিরাপদ আশ্রয়স্থল। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখানে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। স্বাধীনতার পর মসজিদটি সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।
মসজিদের স্থাপত্যশৈলীতেও রয়েছে বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এর গম্বুজ ও খিলানগুলো মুঘল স্থাপত্যরীতির প্রভাব বহন করে। মূল মসজিদের চারপাশে রয়েছে দানবাক্সসহ প্রশাসনিক কক্ষ, শিক্ষার্থীদের হিফজখানা এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটির কার্যালয়।