Home জাতীয় পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু: নীরব দুর্যোগে মৃত্যু মিছিল

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু: নীরব দুর্যোগে মৃত্যু মিছিল

বিশেষ প্রতিবেদন

তারিক-উল-ইসলাম, ঢাকা: বাংলাদেশে যখন ঘূর্ণিঝড়, বন্যা কিংবা বজ্রপাতের মতো দুর্যোগগুলোর বিরুদ্ধে সরকার ও জনগণ সম্মিলিতভাবে প্রস্তুত থাকে, তখনই নীরবে এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় ঘটছে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু। এই ‘নীরব মহামারি’ এখন আর বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি একটি ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তার সংকট। ২০২৫ সালের মে মাসেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ১৫ শিশুর করুণ মৃত্যু ঘটেছে পানিতে ডুবে যার বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য ছিল।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৩১ মে একদিনেই লক্ষ্মীপুর, ভোলা, হবিগঞ্জ, শেরপুর, মানিকগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত ১৩ শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে আছে জমে থাকা বৃষ্টির পানি, খোলা ডোবা, পুকুর, নালার মতো সাধারণ জায়গায় অতি সাধারণ কারণে মৃত্যুবরণ করা নিষ্পাপ শিশুরা। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাগুলোর একটি হয় সেন্টমার্টিনে, যেখানে মাত্র এক বছর বয়সী মুহাম্মদ সাদ বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে জমে থাকা বৃষ্টির পানির গর্তে পড়ে প্রাণ হারায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জনপদভিত্তিক অবকাঠামোগত দুর্বলতা, পানিনিষ্কাশনের অকার্যকর ব্যবস্থা এবং অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবই এই দুর্যোগকে তীব্রতর করছে। ইউনিসেফ-এর এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০টিরও বেশি শিশুমৃত্যু ঘটে এই একক কারণে।

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও এখানে একটি বড় বাধা। পুকুর বা খাল-বিলের আশপাশে খেলাকে এখনো গ্রামীণ সমাজে স্বাভাবিক মনে করা হয়, অথচ শিশুদের নিরাপত্তার দিকটি প্রায় উপেক্ষিত থাকে। অধিকাংশ অভিভাবক কাজের ব্যস্ততায় সন্তানদের ওপর সরাসরি নজরদারি রাখতে পারেন না। শহরাঞ্চলে আবার বৃষ্টির পানি জমে ডোবার সৃষ্টি হলে সেটি হয়ে ওঠে মৃত্যুকূপ। সামান্য একটি বালতির পানিতেও দেড়-দুই বছরের শিশু ডুবে যেতে পারে এটি এখনও অনেকের কাছে অজানা বাস্তবতা।

অপরদিকে, স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় নেই কোনো সুসংহত সচেতনতা কার্যক্রম। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় শিশু নিরাপত্তা বিষয়ে আলাদা কোনো পরিকল্পনা বা জরুরি হেল্পলাইন কার্যকর নেই। অধিকাংশ মৃত্যুই ঘটে পরিবারের সামনে, অথচ কোনো প্রাথমিক চিকিৎসা বা ‘সিপিআর’ (হার্ট রিস্টোরেশন পদ্ধতি) জানে না আশপাশের কেউ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই নীরব দুর্যোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন জাতীয় পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ।

  • প্রতিটি ইউনিয়নে সচেতনতা ক্যাম্পেইন
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা
  • ঝুঁকিপূর্ণ জলাশয় চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড ও বেড়া দেওয়া
  • গৃহস্থালী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ (যেমন পানিভর্তি বালতি ঢেকে রাখা)
    এসব বাস্তবায়নেই শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।


বাংলাদেশের শিশুদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুগুলো কোনো দুর্ভাগ্য নয় এগুলো অবহেলা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতির পরিণতি। সরকার, সমাজ ও পরিবারকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। নইলে প্রতিদিনই আমরা হারাব আরও কিছু ছোট প্রাণ, যাদের মৃত্যু সংবাদ হয়তো পাতার এক কোণে স্থান পাবে, কিন্তু রেখে যাবে আজীবনের হাহাকার।

📣 আপনার সচেতনতা অন্যের জীবন বাঁচাতে পারে!
এই প্রতিবেদনটি যদি আপনার হৃদয় স্পর্শ করে, তবে শেয়ার করুন, যাতে আরও মানুষ সচেতন হয়।
👶 একটি শিশু যেন আর পানিতে ডুবে মারা না যায়—এই বার্তা ছড়িয়ে দিন।

👍 লাইক দিন যদি আপনি বিশ্বাস করেন সচেতনতা গড়তে সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
📲 বন্ধুদের ট্যাগ করুন, পরিবারকে জানান: চলো একসঙ্গে শিশুর জীবন রক্ষা করি।

#শিশুর_জীবন_আমার_দায়িত্ব #সচেতনতা_ছড়াক #পানিতে_ডোবা_রোধ_করুন