Home Second Lead পায়রা বন্দর কেন্দ্র করে দক্ষিণে বিনিয়োগের জোয়ার

পায়রা বন্দর কেন্দ্র করে দক্ষিণে বিনিয়োগের জোয়ার

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পটুয়াখালী: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ২০২৬ সালের পহেলা জুলাই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পায়রা বন্দরের প্রথম পূর্ণাঙ্গ জেটি। এদিন থেকেই দেশের প্রথম সম্পূর্ণ ড্রেজড, গভীর সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মাসুদ ইকবাল।

ড্রেজিং, অবকাঠামো নির্মাণ ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মধ্য দিয়ে গত কয়েক বছরে দ্রুতগতিতে উন্নয়নকাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী ড্রেজিং এবং ২০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দর এলাকায় নির্মিত হয়েছে উন্নত সড়ক অবকাঠামো, নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও যোগাযোগব্যবস্থা।

চীনের বিনিয়োগে নির্মিত রেলসংযোগ, আধুনিক টার্মিনাল, পাইপলাইন, টাগবোট, মুরিং বোট—সবকিছুই পর্যায়ক্রমে যুক্ত হবে বন্দর কার্যক্রমে। পরিকল্পনা রয়েছে পরিবেশবান্ধব আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নেরও। ফলে বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমানেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বন্দরটি এখনো নিজস্ব টার্মিনাল চালুর আগেই ইতোমধ্যে ৫২৯টি আন্তর্জাতিক জাহাজ ও ৩৪২৬টি দেশীয় লাইটার জাহাজ নিরাপদে হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হয়েছে। এসব কার্যক্রম থেকে সরকার রাজস্ব হিসেবে আদায় করেছে প্রায় ২ হাজার ৭৯ কোটি টাকা, যা একটি আশাব্যঞ্জক সূচক।

পায়রা বন্দরের প্রভাব ইতোমধ্যে শিল্প বিনিয়োগে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বন্দর এলাকার মধ্যেই দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে, যেগুলো পুরো অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি পটুয়াখালী ইপিজেড, বন্দরের নিজস্ব শিল্পাঞ্চলসহ একাধিক বিদেশি বিনিয়োগপ্রত্যাশী প্রতিষ্ঠান এ এলাকায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতাতেই নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। তুলনামূলক অনগ্রসর পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল অঞ্চলে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও আধুনিক নগরায়ণের পথ তৈরি হবে।

সরকারও এ সম্ভাবনাকে ঘিরে বন্দরকেন্দ্রিক ‘স্মার্ট ইকোনমিক জোন’ বাস্তবায়নের চিন্তা করছে। এতে করে শুধু পণ্য আমদানি-রপ্তানি নয়, রক্ষণাবেক্ষণ শিল্প, সাপ্লাই চেইন, বন্দর পরিবহন, আবাসন, নির্মাণ, জাহাজ মেরামতসহ নানান খাতে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পায়রা বন্দর দেশের অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে, তা শুধু জিডিপির সংখ্যা নয়, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনের মানেও এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।