বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের সড়ক, গলি ও বাসাবাড়ির সামনে তাকালেই চোখে পড়ে তারের বিশৃঙ্খলা। একের পর এক বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ঝুলছে ক্যাবল টিভি, ইন্টারনেট, ফোন লাইনের অসংখ্য তার। এসব তার পিডিবির খুঁটি ব্যবহার করে বসানো হলেও, পিডিবির কোনো অনুমতি বা নিয়ন্ত্রণ নেই । বরং বছরের পর বছর ধরে এসব খুঁটি দখল করে গড়ে উঠেছে কোটি কোটি টাকার একটি বাণিজ্য, যার নেপথ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের নেতা নামধারী ও স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠি।
শুধু চট্টগ্রাম নয়, রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে মফস্বল শহর, প্রত্যন্ত গ্রাম সব জায়গায় পিডিবির খুঁটি ব্যবহার করে চলছে ডিশ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার অবৈধ কার্যক্রম। কোনো ধরনের ভাড়া বা চুক্তি ছাড়াই এসব খুঁটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা পিডিবির নিজস্ব নীতিমালারও পরিপন্থী। অথচ পিডিবি বিষয়টি জানে, তবুও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। অনেকে বলছেন, পিডিবি যেন এই চক্রের কাছে ‘অসহায়’ হয়ে পড়েছে।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, “এলাকার যুব নেতার অনুমতি ছাড়া এখানে কেউ নতুন সংযোগ দিতে পারে না। পুরো এলাকায় একটিই নেট ও ডিশের লোক কাজ করে। সে মাসে লাখ টাকার ব্যবসা করে।”
এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থানীয় নেতারা ‘একক নিয়ন্ত্রণ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যার মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক ভাগ করে দেওয়া হয় খুঁটি নিয়ন্ত্রিত ব্যবসার মালিকানা। ব্যবসার আয় থেকে একটি অংশ উপরের মহলে পৌঁছায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সড়কে এসব তারের জঞ্জাল এখন জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটপাত বা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে মানুষ হোঁচট খাচ্ছে, তারে জড়িয়ে যাচ্ছে যানবাহনের ছাদ, মাথা। পল্লীমার্কেট এলাকায় এক পথচারী বলেন, “চলার জায়গায় শুধু তার আর তার। রাতে তো ঠিকমতো দেখা যায় না, মাথায় বা গলায় জড়িয়ে যাচ্ছে তার।”
পিডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা কিছু জায়গায় নোটিশ দিয়েছি, তবে রাজনৈতিক চাপ আসে। ”
বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন বা সিটি করপোরেশনও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেই অভিযোগ। বরং এসব ব্যবসায়ীরা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখে।
চট্টগ্রাম নগরের সড়কে এই তারের জটলার কারণে যান চলাচলে সমস্যা বাড়ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অবিলম্বে যদি এই অনিয়ন্ত্রিত খুঁটি দখল বাণিজ্য বন্ধ না হয়, তবে তা একদিকে যেমন নিরাপত্তা হুমকি বাড়াবে, অন্যদিকে নগরের সৌন্দর্যও নষ্ট করবে। সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাসূত্রে জানা যায়, পাঁচটি ওয়ার্ডে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল সরাতে মাটির নিচ দিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘ফাইবার অ্যাট হোম’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে এ সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তির আওতায় ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলি, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলি এবং ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে।