বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক উত্তেজনা এক নতুন বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে, যেখানে যুদ্ধ আর শুধু দুই দেশের সীমিত অস্ত্রভাণ্ডারের খেলা নয় এটি হয়ে উঠেছে এক বহুজাতিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের পরীক্ষাগার। উভয় পক্ষই ময়দানে নামিয়েছে বিশ্বের নানা দেশের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র, যা ভবিষ্যতের সংঘাতে আন্তর্জাতিক অস্ত্রশক্তির ব্যবহারের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে।
ভারত তার বহুমাত্রিক প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে ফরাসি রাফাল জেট, ইসরায়েলি হারপ ড্রোন এবং রাশিয়ান সু-৩০ এমকেআই ফাইটার জেট নামিয়েছে। লাদাখ ও রাজস্থানের আকাশে রাফাল জেটের নিখুঁত অভিযান, সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাকটিক্যাল ড্রোনের নজরদারি এবং ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের (যা রাশিয়ার সহযোগিতায় তৈরি) প্রস্তুতি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
ভারতের সঙ্গে ফ্রান্স, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বর্তমানে বাস্তব যুদ্ধ মঞ্চে পরীক্ষিত হচ্ছে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের প্রযুক্তি-নির্ভরতা এবং বহুমাত্রিক সরবরাহ উৎস তাকে কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে।
অন্যদিকে, পাকিস্তান অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। তাদের ব্যবহৃত চীনা নির্মিত JF-17 থান্ডার যুদ্ধবিমান, চীনের তৈরি SH-15 আর্টিলারি ও উইংলুং-২ ড্রোন ইতিমধ্যে সীমান্তে সক্রিয় হয়েছে। এসব ড্রোনের মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মহড়া চালানো হয়েছে।
চীনের পাশাপাশি তুরস্ক ও কিছু মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাষ্ট্র থেকেও পাকিস্তান সামরিক সহায়তা গ্রহণ করছে। তুর্কি ড্রোন প্রযুক্তি এবং ইরানি রকেট সহায়তা নিয়ে সীমান্তে ‘অসামান্য সমন্বয়’ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সংঘাতে স্পষ্ট হয়েছে, যুদ্ধের সঙ্গে শুধু দেশীয় সামরিক শক্তি জড়িত নয়—এটি আন্তর্জাতিক অস্ত্রবাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের এক প্রতিফলন। যেখানে একদিকে ফরাসি ও ইসরায়েলি প্রযুক্তি ভারতের পক্ষ নিয়েছে, অন্যদিকে চীনা ও তুর্কি অস্ত্র পাকিস্তানের শিবিরে অবস্থান করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একধরনের ‘প্রক্সি অস্ত্রযুদ্ধ’, যেখানে নানা দেশের তৈরি প্রযুক্তি যুদ্ধের ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখছে, যদিও সরাসরি কোনো রাষ্ট্র এখনো যুদ্ধে যুক্ত হয়নি।
জাতিসংঘ ও অন্যান্য কূটনৈতিক মহল এ সংঘাতে বহুজাতিক অস্ত্রের ব্যবহারকে গভীর উদ্বেগের চোখে দেখছে। কারণ, এসব উন্নত অস্ত্রের প্রয়োগ শুধু সামরিক পরিণতি নয়, বেসামরিক জীবন ও অবকাঠামোর ওপরও গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষক ও সাবেক কূটনীতিকদের মতে, “যুদ্ধের সময় বিদেশি প্রযুক্তি ব্যবহার করা নতুন কিছু নয়, তবে ভারত-পাকিস্তানের মতো পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীদের সরাসরি সংঘাতে এ মাত্রার প্রযুক্তির ব্যবহার এক বিপজ্জনক নজির স্থাপন করছে।”
ভারত ও পাকিস্তানের এ সংঘাতে অস্ত্রের উৎস দেখে সহজেই বোঝা যায়, যুদ্ধ এখন আর কেবল সীমান্তের প্রশ্ন নয়, এটি বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য ও প্রযুক্তির আধিপত্যের প্রতিযোগিতাও। দুই দেশের বাহিনী শুধু নিজেদের নয়, তাদের মিত্র দেশগুলোর প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সামর্থ্যও একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
এই প্রেক্ষাপটে কূটনৈতিকভাবে সংঘাত এড়ানো গেলে কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।