বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: কাঁচাবাজারে যারা গরু বা খাসির মাংস কিনতে যান, তাদের বড় একটি অংশ প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। শুধু দাম নয়, এখনকার প্রতারণা মাংসের ‘ওজন’ কেন্দ্রিক। দোকানদাররা হাড়, চর্বি এমনকি মাঝে মাঝে একেবারে অপ্রয়োজনীয় অংশ মিশিয়ে দিচ্ছেন মাংসের সঙ্গে। ফলে এক কেজি মনে হলেও আপনি হয়তো পেয়েছেন মাত্র সাত-আটশ গ্রাম খাঁটি মাংস!
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ইপিজেডের একটি কারখানায় কাজ করেন। গত সপ্তাহে গরুর মাংস কিনে এমন প্রতারণার মুখোমুখি হয়েছেন। তার ভাষায়, “এক কেজি মাংস কিনেছিলাম ৭২০ টাকায়। রান্না করতে গিয়ে দেখি তিন ভাগের এক ভাগই হাড়। দোকানদার বলেছে হাড় ছাড়া মাংস কীভাবে বিক্রি করব! অথচ রান্না শেষে আসল মাংসের পরিমাণ ছিল এক কাপও না।”
এই ঘটনা নতুন নয়। পতেঙ্গা,, হালিশহর, কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজার, ফিরিঙ্গিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার বাজার পর্যবেক্ষণেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। একাধিক দোকানদার বলছেন, “চাহিদা থাকলে আমরাও হাড় ও চর্বি বাদ দিয়ে দেই, কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাই এই ফাঁদ বুঝতে পারেন না।”
ওজন কারচুপি: কৌশলগত প্রতারণা
প্রতারণার কৌশল অত্যন্ত সূক্ষ্ম। প্রথমত, দোকানিরা ওজন মেশিনে গোটা ব্যাগ রেখে দেন, ফলে প্লাস্টিক ব্যাগের ওজনও মাংসের ওজন হিসেবে ধরা হয়। দ্বিতীয়ত, মাংস কাটার সময় ‘ভেতরের চর্বি’ বা অস্থি বিশিষ্ট অংশ একত্র করে দেওয়া হয়, যা সাধারণত রান্নায় তেমন ব্যবহার হয় না। তৃতীয়ত, কিছু দোকানে ওজন মেশিন নিজেই ক্যালিব্রেট করা থাকে না, যা আবার একপ্রকার প্রতারণা।
প্রশাসনের অভিযান: বাস্তব উদাহরণেই প্রমাণ
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এই প্রতারণা হাতেনাতে ধরেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ২০২৪ সালের জুন মাসে গরুর মাংসে ওজনে কারচুপির অভিযোগে একাধিক দোকানে অভিযান চালিয়ে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। দোকানদাররা প্লাস্টিক ব্যাগসহ মাংস ওজন দিচ্ছিলেন।
২০২৩ সালের রমজান মাসে রিয়াজউদ্দিন বাজারে, গরুর মাংসে অতিরিক্ত হাড় ও চর্বি মিশিয়ে ওজন বাড়ানোর কারণে চারটি দোকানকে মোট ৩০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এক দোকানের লাইসেন্স সাময়িক স্থগিত করে সিটি করপোরেশন।
২০২২ সালের নভেম্বর মাসে কর্ণফুলী মার্কেট এলাকায়, দোকানিরা ইচ্ছাকৃতভাবে ওজন মেশিনের ক্যালিব্রেশন বদলে ৯০০ গ্রাম দেখাচ্ছিলেন এক কেজি বলে। এই অপরাধে দুইটি দোকান সিলগালা এবং তিন দোকানিকে জরিমানা করা হয় মোট ২৫,০০০ টাকা।
ভোক্তাদের জন্য করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে দোকানে ওজন মেশিনের কাঁটা দেখে নিশ্চিত হতে হবে। মাংসের মধ্যে চর্বি বা হাড় বেশি থাকলে সেটি ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার ক্রেতার রয়েছে। পাশাপাশি কেউ প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন।
সাধারণ মানুষের অধিকার প্রশ্নের মুখে
সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও পুষ্টির অধিকার আজ বাজারি বাণিজ্যের বলি হচ্ছে। এখনই সময় কঠোর আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির। নাহলে, ‘এক কেজি মাংসে এক কেজি হাড্ডি’—এই কৌতুক একদিন বাস্তব হয়ে দাঁড়াবে।
আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানান:
আপনি কি কখনো মাংস কিনে এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন? নিচে মন্তব্য করুন বা প্রতিবেদনটি শেয়ার করে আপনার মত জানিয়ে দিন।