Home Third Lead মাছ কিনছেন না পানি? বাজারে প্রতিদিন ঠকছেন হাজারো মানুষ

মাছ কিনছেন না পানি? বাজারে প্রতিদিন ঠকছেন হাজারো মানুষ

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: কাঁচাবাজারে মাছে পানি ছিটিয়ে ওজন বাড়ানোর প্রতারণা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় তো পুরো মাছটাই পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়, যেন ওজন কিছুটা বেশি দেখায়, মাছ ঝকঝকে দেখায়, আর বিক্রেতার লাভের খাতা ভারী হয়। অথচ এই প্রতারণায় প্রতিদিন ঠকছেন হাজারো সাধারণ মানুষ, যাদের অনেকে জানেনই না তারা আসলে মাছের সঙ্গে ‘পানি’ও কিনছেন!

বিশেষ করে রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, সিলভার কার্প, তেলাপিয়া বা দেশি চাষের মাছ। এসব মাছেই দেখা যায় সবচেয়ে বেশি পানি মেশানো হয় কৌশলে। মাছের গায়ে অনবরত পানি ছিটানোর ফলে একদিকে মাছ কৃত্রিমভাবে তাজা দেখায়, অন্যদিকে তা অতিরিক্ত পানি শোষণ করে ওজনে বেড়ে যায়।

ক্রেতার অভিজ্ঞতা: মাছ কিনে ঠকেছেন

 নগরীর চকবাজার এলাকার গৃহবধূ রুমানা হোসেন জানালেন, “আমি সকালে এক কেজি রুই মাছ কিনি ৩৮০ টাকায়। বাসায় এনে দেখি পানি ঝরতেই মাছ হয়ে গেল প্রায় ৮০০ গ্রাম। বুঝলাম, পুরো শরীর ভিজে ছিল বলে ওজন বেশি হয়েছিল।”

বিভিন্ন বাজারে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, অনেক দোকানে মাছ টবের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এর ফলে মাছ শুধু বাইরে নয়, ভেতর থেকেও পানি শুষে নেয়। আর কাটার সময় দেখা যায়, সেই পানি ছিটকে বের হচ্ছে।

দোকানিদের কৌশল: মাছকে ‘তাজা’ দেখাতে পানি

ফিরিঙ্গিবাজারে কাঁচাবাজারে এক মাছ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “গরমে মাছ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই একটু পানি ছিটিয়ে রাখি। তাতে মাছ ভালো থাকে, আর ক্রেতারা দেখে কিনে ফেলেন।” কিন্তু বাস্তবে এই ‘ভালো রাখা’র ছলে তারা বাড়িয়ে নিচ্ছেন ওজন, যার অর্থ ক্রেতার পকেট থেকে বাড়তি টাকা বেরিয়ে যাওয়া।

প্রশাসনের অভিযান: নগণ্য, অনিয়মিত

অনুসন্ধানে জানা যায় , এই প্রবণতা প্রায় প্রতিটি কাঁচাবাজারেই আছে। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান খুবই অনিয়মিত।
২০২৩ সালে কর্ণফুলী ও বাদুরতলা বাজারে কয়েকটি দোকানে এ ধরনের প্রতারণা ধরা পড়ে। মাছ কাটার সময় অতিরিক্ত পানি পড়ছিল বলে তাৎক্ষণিকভাবে দুই দোকানিকে জরিমানা করে প্রশাসন। কিন্তু এর পর আর কোনো উল্লেখযোগ্য অভিযান হয়নি। ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবেই চলছে ‘পানি বিক্রি’র এই কৌশল।

স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে অনেক সময় থাকে বাজারের ময়লা ও জীবাণু। মাছ দিনের পর দিন এই পানিতে পড়ে থাকলে তাতে ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যায়। সেখান থেকে হতে পারে পেটের রোগ, ডায়রিয়া, এমনকি ফুড পয়জনিং।

ভোক্তাদের জন্য পরামর্শ

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ কেনার সময় তার গায়ে পানি থাকলে মুছে দেখতে হবে আসল ওজন কত। সম্ভব হলে ওজন করে কাটানোর সময় উপস্থিত থাকুন। আর চোখধাঁধানো চকচকে মাছ নয়, স্বাভাবিক মাছই অনেক সময় বেশি ভালো হয়।


আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের জানান:
আপনি কি কখনো মাছের গায়ে পানি মাখিয়ে ওজনে ঠকেছেন? নিচে মন্তব্য করুন বা প্রতিবেদনটি শেয়ার করে আপনার মতামত দিন।