Home সারাদেশ বরগুনার সীমা থেকে যশোরের সীমা: প্রেম-ত্রিভুজের মহারণ

বরগুনার সীমা থেকে যশোরের সীমা: প্রেম-ত্রিভুজের মহারণ

ছবি: এ আই
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, যশোর: বরগুনার আলোচিত সীমা কাহিনীর কথা আজও অনেকের মনে গেঁথে আছে—এক নারীকে ঘিরে দুই পুরুষের সংঘর্ষে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। সেই কাহিনীর ছায়া যেন আবারও ফিরে এলো যশোরে, তবে চরিত্রে নতুন সীমা, আর মঞ্চ হলো থানার প্রাঙ্গণ। মঙ্গলবার দুপুরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাকে ঘিরে শহরে তৈরি হয় অভূতপূর্ব চাঞ্চল্য।
সীমার সংসার ভাঙনের গল্প

ফরিদপুরের কানাইপুরের গৃহবধূ সীমা অধিকারী দীর্ঘ ৩৬ বছর সংসার করেছেন স্বামী বিকাশ অধিকারীর সঙ্গে। তাঁদের সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু এত বছরের সম্পর্কেও সীমার মনে শান্তি মেলেনি। তাঁর অভিযোগ, বিকাশের সংসারে তিনি নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ কারণেই তিনি ধীরে ধীরে দূরে সরে আসেন এবং ফরিদপুর সদরের বাসিন্দা পলাশ কুন্ডুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন।

প্রেমের সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে গভীর হতে থাকে। অবশেষে সীমা বিকাশের ঘর ছেড়ে পালিয়ে যান পলাশের হাত ধরে। শুধু তাই নয়, সীমা ও পলাশ ভারতে গিয়ে বিয়েও করেন। তিন বছরের এই সম্পর্ক বিয়ের পর আরও দৃঢ় হয়।

যশোরে অচেনা অধ্যায়

বিয়ে শেষে নতুন স্বামী পলাশকে নিয়ে যশোরের এক হোটেলে ওঠেন সীমা। হয়তো ভেবেছিলেন নতুন জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্যের লিখন ভিন্ন। খবর পেয়ে যশোরে হাজির হন প্রথম স্বামী বিকাশ অধিকারী। এরপরই শুরু হয় ত্রিমুখী সংঘর্ষ—সরাসরি হোটেল থেকে থানা পর্যন্ত।

থানা চত্বরে লাইভ নাটক

কোতোয়ালি থানার প্রাঙ্গণ একসময় রূপ নেয় মঞ্চে। সীমাকে ঘিরে দুই স্বামী মুখোমুখি দাঁড়ান। হাতাহাতি, টানাহেঁচড়া, এমনকি চড়-থাপ্পড় পর্যন্ত গড়ায় পরিস্থিতি। দৃশ্যটা দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। কেউ বিস্মিত, কেউবা হেসে কুটিকুটি। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। এক দর্শক রসিকতা করে বলেন, “বরগুনার সীমার কাহিনি এবার যশোরে লাইভ দেখছি!”

দুই স্বামীর দাবি

দ্বিতীয় স্বামী পলাশ কুন্ডুর দাবি, সীমার সঙ্গে তাঁর তিন বছরের সম্পর্ক, আর সেই সম্পর্কের পরিণতিই তাঁদের বিয়ে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা দুজনেই ইচ্ছা করে বিয়ে করেছি। এখন একসাথে থাকতে চাই। বিকাশ আমাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

অন্যদিকে সীমা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি আর বিকাশের কাছে ফিরবেন না। তাঁর কথায়, “বিকাশের সংসারে আমি নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাই বাধ্য হয়েই তাকে ছেড়ে নতুন জীবনের পথে হাঁটতে হয়েছে। আমি পলাশের সঙ্গেই থাকতে চাই।”

কিন্তু প্রথম স্বামী বিকাশের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁর দাবি, সীমা পরকীয়ায় জড়িয়ে সংসার ভেঙেছেন। শুধু তাই নয়, পালানোর সময় নগদ টাকা ও গয়নাও নিয়ে গেছেন। বিকাশ দৃঢ়ভাবে বলেন, “আমার সংসার আমি ভাঙতে দেব না। সীমাকে যেকোনো মূল্যে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব।”

পুলিশের হস্তক্ষেপ

ঘটনার খবর পেয়ে জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি (তদন্ত) কাজী বাবুল জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং সীমা, বিকাশ ও পলাশকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বর্তমানে তাঁরা থানার হেফাজতে আছেন এবং পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে।

শহরজুড়ে আলোচনা

যশোরে এই ঘটনার পর শহরজুড়ে তৈরি হয়েছে আলোচনার ঝড়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে বাজার, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তুমুল তর্ক-বিতর্ক। কেউ বলছেন সীমা নতুন জীবনের পথে এগোনোর অধিকারী, কেউ আবার বিকাশের পক্ষে সওয়াল করছেন। তবে অনেকেই এটাকে নিছক এক নাটক হিসেবে দেখছেন, যা সিনেমাকেও হার মানাতে পারে।

👉 এখন সবার একটাই প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত সীমা কাকে বেছে নেবেন? প্রথম স্বামী বিকাশ, না কি দ্বিতীয় স্বামী পলাশ? এই উত্তরের দিকেই তাকিয়ে আছে যশোরবাসীসহ পুরো দেশ।