বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ওয়াশিংটন–নয়াদিল্লি বাণিজ্য সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ভারতের ওপর মোটা অঙ্কের শুল্ক চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও এ নিয়ে আমেরিকার চাপ ও হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ভারত এখনও রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কিনে চলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো অভিযোগ করে বলেন, “ভারতের ওই তেল আমেরিকার প্রয়োজন নেই। ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে তা শোধন করে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে বিক্রি করছে। এতে ভারত বিপুল মুনাফা অর্জন করছে, আর রাশিয়া সেই অর্থ ব্যবহার করছে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে।”
বাণিজ্য ঘাটতি ও শুল্ক সংকট
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি দীর্ঘদিনের। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৯০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য ভারতের অনুকূলে রয়েছে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, নয়াদিল্লির উচ্চ শুল্কনীতি ও ভর্তুকি নির্ভর রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
পিটার নাভারো ভারতের শুল্ক নীতিকে ‘শুল্কের মহারাজা’ মন্তব্য করে কটাক্ষ করেছেন। তিনি জানান, চলতি সপ্তাহেই ভারতীয় পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এর ফলে ভারতীয় টেক্সটাইল, কেমিক্যাল, ওষুধ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত সরাসরি চাপে পড়তে পারে।
তেল আমদানির ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্থিতিশীল। এ অবস্থায় রাশিয়ার ডিসকাউন্ট অফারে ভারত বিপুল পরিমাণ অশোধিত তেল আমদানি করছে। বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ভারতের তেল আমদানির প্রায় ৩০–৩৫ শতাংশই রাশিয়া থেকে আসছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।
এ তেল ভারতের শোধনাগারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হচ্ছে, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। এতে ভারতীয় রিফাইনাররা মার্জিন বাড়াতে পারছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, এর মাধ্যমে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে।
সম্ভাব্য প্রভাব ও ঝুঁকি
১. ভারতীয় রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় ধাক্কা খেতে পারে, বিশেষ করে পোশাক ও ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে।
২. দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক উত্তপ্ত হলে ভারত বিকল্প বাজারের দিকে ঝুঁকতে পারে, যেমন ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া।
৩. তবে মার্কিন চাপের কারণে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজারে সতর্ক অবস্থান নিতে পারে।
৪. দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়া-ভারত ঘনিষ্ঠতা বাড়লে পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক জটিল হতে পারে।
সমালোচনার মাঝেও প্রশংসা
সমালোচনার পাশাপাশি ভারতের নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন নাভারো। তিনি বলেন, “আমি ভারতকে ভালবাসি। মোদী একজন অসাধারণ নেতা। তবে তাদের বলব, বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের ভূমিকা নতুন করে ভেবে দেখা উচিত। কারণ বর্তমান নীতির ফলে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সমর্থন পাচ্ছে।”