Home তথ্য প্রযুক্তি ফেসবুক কমার্সে প্রতারণার ফাঁদ

ফেসবুক কমার্সে প্রতারণার ফাঁদ

চটকদার বিজ্ঞাপনে নিঃস্ব হচ্ছেন ক্রেতারা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বর্তমান সময়ে কেনাকাটার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। হাতের নাগালে পছন্দের পণ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলেও, এই প্ল্যাটফর্মকে পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একদল সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। পণ্যের গুণগত মান, দাম এবং ডেলিভারি নিয়ে প্রতিদিন শত শত ক্রেতা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ছবিতে ঝকঝকে, হাতে পেলেই বিবর্ণ:অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশ ফেসবুক পেজ ইন্টারনেট থেকে নামানো নামী-দামী ব্র্যান্ডের বা বিদেশি মডেলদের পরা পোশাকের ছবি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন দেয়। কিন্তু গ্রাহক যখন পণ্যটি হাতে পান, তখন দেখা যায় কাপড়ের মান অত্যন্ত নিম্নমানের এবং সেলাইও ক্রুটিপূর্ণ। ছবির রঙের সাথে বাস্তবের পণ্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

সাইজ ও ত্রুটি নিয়ে ভোগান্তি:অনলাইন শপিংয়ে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পণ্যের মাপ (Size) নিয়ে। কাঙ্ক্ষিত সাইজ অর্ডার দিলেও গ্রাহককে পাঠানো হচ্ছে অন্য মাপের পণ্য। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স বা গৃহস্থালি সামগ্রীর ক্ষেত্রে ভাঙা বা ত্রুটিপূর্ণ পণ্য দেওয়ার অভিযোগ অহরহ। অনেক ক্ষেত্রে ডেলিভারি ম্যানের সামনে প্যাকেট খোলার সুযোগ না থাকায় গ্রাহক প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন পণ্য হাতে পাওয়ার পর।

অস্বাভাবিক দাম ও মানহীন পণ্য:ফেসবুকে অনেক সময় ‘এক্সক্লুসিভ’ বা ‘ইম্পোর্টেড’ তকমা লাগিয়ে সাধারণ মানের পণ্যের দাম রাখা হচ্ছে অস্বাভাবিক বেশি। বিশেষ করে কসমেটিকস ও চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে নকল পণ্য আসল বলে চড়া দামে বিক্রি করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে করে সাধারণ ক্রেতারা একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, অন্যদিকে নকল প্রসাধনী ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতেও পড়ছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা: রাজধানীর এক বেসরকারি চাকরিজীবী জানান, “একটি ঘড়ি পছন্দ করে অগ্রিম পেমেন্ট করেছিলাম। কিন্তু পার্সেল খোলার পর দেখি সেটি একটি প্লাস্টিকের খেলনা ঘড়ি। এরপর ওই পেজে যোগাযোগ করতে গেলে দেখি আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।”

আইনগত প্রতিকার: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসার কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এই প্রতারণা বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারিত হলে ই-মেইল বা সরাসরি আমাদের কাছে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। তবে কেনাকাটার আগে পেজের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা আছে কি না, তা যাচাই করে নেওয়া জরুরি।”

ক্রেতা সাধারণের দাবি, ফেসবুক কমার্স বা ‘এফ-কমার্স’ নিয়ন্ত্রণে সরকারের কঠোর নজরদারি এবং লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা এখন সময়ের দাবি।