Home বিনোদন বজরঙ্গি ভাইজান: সীমান্ত পেরিয়ে এক হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প

বজরঙ্গি ভাইজান: সীমান্ত পেরিয়ে এক হৃদয়ছোঁয়া ভালোবাসার গল্প

বিনোদন ডেস্ক:

২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া হিন্দি চলচ্চিত্র ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ শুধু একটি বিনোদনমূলক ছবি নয়, বরং এটি মানবিকতা, ভালোবাসা ও নিরপেক্ষ সত্যের এক অনবদ্য চিত্রনাট্য। এই সিনেমার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সালমান খান, যিনি বজরঙ্গ বালি ভক্ত ‘পবন’ চরিত্রে অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন।

সিনেমার কাহিনি শুরু হয় পাকিস্তানের এক নিরীহ মেয়ে মুন্নির (হার্শালি মালহোত্রা) হারিয়ে যাওয়া দিয়ে। ভারতের এক অচেনা শহরে এসে সে মুখে না বলতে পারা এক বোবা শিশু, যার একমাত্র চাওয়া মায়ের কাছে ফিরে যাওয়া। ঠিক তখনই তার জীবনে আসেন বজরঙ্গি ভাইজান, যিনি ধর্মান্ধতাকে পেছনে ফেলে মানবতার জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত হন।

এই চলচ্চিত্রে সালমান খানকে দেখা গেছে একেবারে অন্য আলোকে। হিন্দি সিনেমায় তাঁর সাধারণত অ্যাকশনধর্মী চরিত্রই পরিচিত হলেও ‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এ তিনি দর্শককে হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন এবং ভাবিয়েছেন। একাধিক আবেগঘন দৃশ্যে তাঁকে দেখা গেছে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ, সরল অথচ অটল বিশ্বাসে ভরপুর এক যুবকের ভূমিকায়, যার সাহস ও বিশ্বাস এক শিশুকে সীমান্ত পেরিয়ে মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।

চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন কবির খান। তাঁর ক্যামেরার দৃষ্টি এবং গল্প বলার কৌশল এই সিনেমাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বাকি চরিত্রদের মধ্যে বিশেষভাবে প্রশংসনীয় ছিলেন অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, যিনি এক পাকিস্তানি সাংবাদিকের ভূমিকায় সিনেমায় প্রাণ সঞ্চার করেছেন। তাঁর উপস্থিতি কাহিনির আবেগ ও গতি দুই বাড়িয়ে দেয়।

‘বজরঙ্গি ভাইজান’-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, এটি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে পাশ কাটিয়ে এক শিশুর চোখ দিয়ে দুই দেশের মানুষের ভালোবাসা, আতিথেয়তা ও মানবিকতার দিকটি তুলে ধরেছে। গান, চিত্রায়ণ এবং সংলাপ সব কিছুই একে করে তুলেছে একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র অভিজ্ঞতা।

মুন্নির নিরব কান্না, বজরঙ্গির সরলতা, আর সীমান্তে দাঁড়িয়ে দুই দেশের ভালোবাসায় কান্নাভেজা চোখ—এই মুহূর্তগুলো দর্শকের হৃদয়ে এখনও রয়ে গেছে। সিনেমার শেষ দৃশ্যে পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যেও বজরঙ্গির সাহসিকতা সম্মানিত হয়, যা আরও একবার প্রমাণ করে, মানবতা কাঁটাতারে থেমে থাকে না।

সিনেমাটি মুক্তির পর বক্স অফিসে ঝড় তোলে, সেইসঙ্গে জিতেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মান। এটি বলিউডে ‘মানবিক সিনেমা’র এক নতুন ধারা সূচনা করে, যা শুধু বিনোদন নয় একটি সামাজিক বার্তা বহন করে।