Home আন্তর্জাতিক পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা: আট শতাধিক নিহত, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা: আট শতাধিক নিহত, লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত

ছবি সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানে চলমান মৌসুমি বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কয়েক সপ্তাহের টানা বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ছেড়ে দেওয়া পানির প্রবাহে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বিশেষত পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নদীর পানি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা দিনরাত চেষ্টা চালালেও মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই গভীর হচ্ছে।
ছবি সংগৃহীত

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ গৃহহারা হয়ে অস্থায়ী আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছে। বন্যায় প্লাবিত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও অবকাঠামো। বিশেষজ্ঞদের মতে, নদীভাঙন, অবৈধ নির্মাণ এবং বন উজাড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।

পাঞ্জাবের রাভি, চেনাব ও সুতলেজ নদীতে ‘মাঝারি’ থেকে ‘অত্যন্ত উচ্চ’ পর্যায়ের বন্যা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী প্রায় দেড় লাখ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকেই এখনো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে আটকে আছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ, যেখানে মাত্র একদিনেই দেড় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পাহাড়ি ঢল ও ভূমিধসে অসংখ্য গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।

ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, অনেক দুর্গম এলাকায় এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে ডায়রিয়া, জ্বর ও অন্যান্য জলবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, জরুরি সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে এবং অনেক পরিবার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

ছবি সংগৃহীত

বন্যার প্রভাবে কৃষিক্ষেত্রও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিপুল ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত এবং দুর্বল অবকাঠামো পরিকল্পনা পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ সংকট ডেকে এনেছে। তারা মনে করছেন, টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা, বন সংরক্ষণ ও আধুনিক নগর পরিকল্পনা ছাড়া ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।

মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের তীব্র সংকট কাটাতে জরুরি সহায়তা এখন সময়ের দাবি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


👉 পাঠক, পাকিস্তানের এই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মতামত কী? মন্তব্য করুন এবং প্রতিবেদনটি শেয়ার করে মানবিক সহায়তার আহ্বান পৌঁছে দিন।