বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: রাজশাহীতে বহুল বিতর্কিত বরখাস্ত উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব হাসানকে বিক্ষুব্ধ জনতা গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। শনিবার (২৩ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে নগরীর ভদ্রার হজের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনির শিকার মাহবুব হাসান (৩৫) দীর্ঘদিন ধরেই নিরীহ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসানো, ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগে আলোচিত ছিলেন। তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরের সেক্রেটারি জসিম উদ্দিন সরকার এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক মহানগর সভাপতি খাইরুল ইসলাম।
বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করতে গিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, “এ সেই হাসান, যে কখনো গাঁজা, কখনো ইয়াবা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠাত। সাংবাদিক রাজিব আলী রাতুলসহ বহু মানুষকে সে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।” তিনি দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যার নেপথ্যে ছিল হাসান।
২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে এসআই হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুব হাসান। শুরুতে মতিহার থানায় কর্মরত থাকলেও ২০১৬ সালে নগর গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) যোগ দেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি পুলিশে চাকরি নেন এবং ডিবিতে থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালান।
অভিযোগ অনুযায়ী, শুধু রাজনৈতিক নেতাকর্মীই নয়, সাধারণ মানুষকেও চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। সাংবাদিক রাজিব আলী রাতুলের পরিবার তার চাঁদাবাজির শিকার হয়। তাদের অভিযোগ, ২০১৯ সালে রাজিবকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণের পর তার বাবার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন হাসান। কিন্তু এরপরও রাজিবকে মাদক মামলায় জেলে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি টানা ১৬ মাস কারাভোগ করেন।
ঘটনার বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, হাসানকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বোয়ালিয়া থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, চাঁদাবাজির একটি মামলায় ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্য মামলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাতেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. গাজিউর রহমান বলেন, “হাসান সর্বশেষ নগর ডিবিতে কর্মরত ছিলেন। এরপর তাকে বরখাস্ত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার পর রাজশাহীতে জনমনে স্বস্তি ফিরলেও, স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে।