বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার বিষয়। তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের বিপুল রপ্তানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলনামূলক কম পরিমাণ আমদানির ফলে তৈরি হয়েছে এই ভারসাম্যহীনতা। সম্প্রতি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ওয়াশিংটন সফর করেন দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক। সেখানে কৃষিপণ্য ও কাঁচামাল আমদানির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্য আনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নেন তিনি।
তিনি একাধারে প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকম গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজেরও গুরুত্বপূর্ণ কর্ণধার এবং চিটাগাং চেম্বার ও এফবিসিসিআিই’র প্রাক্তন পরিচালক। যুক্তরাষ্ট্র সফরে তিনি মার্কিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। তাঁর সাথে কথা হয় বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধির।
প্রশ্ন: যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বেসরকারি খাত কী ভূমিকা রাখছে?
আমিরুল হক:
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি পর্যায় থেকেও অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছি। সরকারি প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে আমি ওয়াশিংটন সফরে যাই। সেখানে মার্কিন রপ্তানিকারকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। এসব বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সয়াবিন বীজ ও তুলা আমদানির সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
ডেলটা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে আমি নিজেই প্রায় ১০ কোটি ডলারের সয়াবিন বীজ আমদানির চুক্তি করি। এ ছাড়া মেঘনা গ্রুপ, সালমা গ্রুপ ও মোশাররফ গ্রুপের পক্ষ থেকেও বড় অঙ্কের তুলা আমদানির এমওইউ সই হয়েছে।
প্রশ্ন: বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কতটা?
আমিরুল হক:
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি ডলার। আমরা লক্ষ্য করছি, কৃষিভিত্তিক পণ্য যেমন সয়াবিন, ভুট্টা, তুলা ও গম আমদানির মাধ্যমে এই ঘাটতির একটি বড় অংশ, প্রায় ২০০ কোটি ডলার, কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: নতুন শুল্ক হার প্রতিযোগী দেশের তুলনায় কতটা সহায়ক হয়েছে বাংলাদেশের জন্য?
আমিরুল হক:
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রীলঙ্কা। বর্তমান শুল্কনীতিতে বাংলাদেশের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক, যা ভিয়েতনাম ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমান। পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর শুল্ক ১৯ শতাংশ।
ভারতের ওপর এই হার ২৫ শতাংশ, যা আমাদের জন্য তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থান। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই হার ৩০ শতাংশ। সব মিলিয়ে বলা যায়, আমরা এখন প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছি।
প্রশ্ন: এই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কী?
আমিরুল হক:
এগুলো এককালীন চুক্তি নয়, বরং একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এসব কৃষিপণ্যের আমদানি অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশ আরও সহজ করতে বাণিজ্যকৌশল ও মানোন্নয়নে আমাদের জোর দিতে হবে।