বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
দীর্ঘদিন সফলভাবে নেতৃত্ব প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছিলেন লিন ব্লেডস। বিশ্বজুড়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির কারণে মহামারির সময় তার ক্লায়েন্ট সংখ্যা তিন গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু এই অতিরিক্ত চাপ তার শরীরের ভিতরে চলছিল এক নিঃশব্দ বিপর্যয়। এক সময় তার মেরুদণ্ডে দুইটি ডিস্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তাকে তিন ইঞ্চি স্ক্রু দিয়ে অস্ত্রোপচার করে বাঁচাতে হয়।
“আমার মনে হতো আমি সব সামলে নিতে পারি। পরিবার, কাজ, সংসার—সবকিছু আমার ঘাড়েই,” বলেন ব্লেডস। কিন্তু একদিন হাঁটতে গিয়ে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। চিকিৎসকেরা জানান, আগেভাগে শারীরিক থেরাপি নিলে এই বিপর্যয় এড়ানো যেত। কিন্তু ব্লেডস তখন নিজের শরীরের ডাক শুনতে পাননি।
এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এখন তিনি বলেন, “নিজেকে উপেক্ষা করার ফল আমি শরীর দিয়ে টের পেয়েছি। এখন আমি জানি, না বলা মানে দুর্বলতা নয়, বরং সচেতনতা।”
নারীদের মধ্যে বার্নআউট বা দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ও শারীরিক ক্লান্তির হার বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। মেন্টাল হেলথ সংস্থার তথ্যমতে, নারীদের ৯৪ শতাংশ গত এক বছরে উচ্চ বা চরম মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে ৩৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে—যেখানে তারা একদিকে সন্তান, অন্যদিকে কর্মজীবন ও বয়সজনিত পরিবর্তনের ভার বয়ে চলেছেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জাইমি জনসনের মতে, “আমাদের সমাজে নারীরা নিজেদের ক্লান্তি বা অস্থিরতাকে গুরুত্ব দেন না। তারা একে ব্যস্ত জীবনের স্বাভাবিক অংশ মনে করেন। কিন্তু এই মানসিকতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে যায়।”
ডা. ক্লেয়ার অ্যাশলি, যিনি একজন চিকিৎসক ও স্নায়ুবিজ্ঞানী, তিনি নিজেও ছিলেন একসময় বার্নআউটের শিকার। শিশুদের লালন-পালন, রোগীদের চিকিৎসা এবং স্বামীর অনুপস্থিতি—সব মিলিয়ে একদিন হঠাৎ টেলিফোনে কথা বলতে বলতে তার প্রথম প্যানিক অ্যাটাক হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অ্যাশলি তখন বুঝতে পারেন, তিনি আর আগের মতো চলতে পারবেন না। পরে কর্মঘণ্টা কমিয়ে নেন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা গ্রহণ করেন।
আজ তিনি ‘ডাক্তারদের কণ্ঠস্বর’ সংগঠনের মুখপাত্র এবং বার্নআউট প্রতিরোধে কাজ করেন। তার মতে, “বার্নআউট শুধু মানসিক ক্লান্তি নয়, এটি মস্তিষ্কের গঠন পর্যন্ত বদলে দিতে পারে। অনুভূতিগুলোর ভারে মানুষ ভেঙে পড়ে—এটা কল্পনা নয়, বাস্তব।”
নারীরা এখনও সমাজে নিজেকে প্রমাণ করতে গিয়ে নিজের প্রয়োজন ভুলে যান। কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তবু স্বীকৃতি পান না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নিজের সীমা জানা এবং ‘না’ বলতে পারা মানেই আত্মমর্যাদা রক্ষা।
লিন ব্লেডস এখন নারীদের উদ্দেশে বলেন, “নিজেকে ভালো না রাখলে, কেউ আপনার কাছ থেকে সেরা কিছু পাবে না।”
-সংগৃহীত