বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ঘোষিত ২৩৭ আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অন্তত ৫০টি আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতা ও তাদের সমর্থকদের ক্ষোভ, বিক্ষোভ এবং সড়ক অবরোধের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দলের হাইকমান্ড। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিরোধ মেটাতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশাপাশি স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে গঠিত একাধিক টিম কাজ করছে সমস্যা সমাধানে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১০ থেকে ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন বা তালিকা সংশোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
মনোনয়নবঞ্চিতদের সঙ্গে হাইকমান্ডের ম্যারাথন বৈঠক
গত ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন জেলায় অসন্তোষ দানা বাঁধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশান কার্যালয়ে এবং সুবিধাজনক বিভিন্ন স্থানে মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। ইতোমধ্যে জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছে হাইকমান্ড।
বৈঠক সূত্র জানায়, বঞ্চিত নেতাদের দলীয় ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। জনভোগান্তি সৃষ্টি হয় বা দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়—এমন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ থাকলে তা রাজপথের বদলে লিখিত আকারে জমা দিতে বলা হয়েছে।
১০-১৫ আসনে সংকট তীব্র
বিএনপির অভ্যন্তরীণ জরিপ ও তদন্ত টিমের তথ্যমতে, ঘোষিত ২৩৭ আসনের মধ্যে অর্ধশতাধিক আসনে অসন্তোষ রয়েছে। তবে ২০-২৫টি আসনে এই বিরোধ প্রকট এবং ১০-১৫টি আসনে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করেছে। মনোনয়নবঞ্চিতদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে পুনরায় জরিপ চালানোর অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সক্রিয় তারেক রহমান
তৃণমূলের ক্ষোভ প্রশমনে লন্ডন থেকে স্কাইপি ও জুমের মাধ্যমে নিয়মিত বিদ্রোহী নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন তারেক রহমান। তিনি সবাইকে দলের স্বার্থে ছাড় দেওয়ার এবং চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ বিষয়ে বলেন, “বড় দলে মনোনয়ন ঘিরে বিরোধ হওয়া স্বাভাবিক। আমরা বঞ্চিতদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষোভ নিরসনের চেষ্টা করছি। আশা করি সব মিটে যাবে। তবে তফসিল ঘোষণার পরও যারা দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাঠের চিত্র: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম
মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে ঢাকা-১৪ আসনে। এখানে সানজিদা ইসলাম তুলির মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে এস এ সিদ্দিক সাজুর সমর্থকরা নিয়মিত বিক্ষোভ করছেন। সাজুর পক্ষে ১২৬ জন পদধারী নেতা লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইতোমধ্যে সাজুকে শোকজ করা হয়েছে।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নানের পরিবর্তন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এছাড়া সিলেট-৬, চট্টগ্রাম-১, ১২ ও ১৩, যশোর-১ ও ২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসনেও প্রার্থী পরিবর্তনের জোরালো দাবি উঠেছে।
তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত মনোনয়নে এসব দাবির কতটুকু প্রতিফলন ঘটে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।










