ফিচার প্রতিবেদন:
আমিরুল মোমেনিন, ঢাকা:
অনেকেই বলে, ‘বিড়াল নিজের মতো থাকে।’ এই বাক্যটি যতটা সত্য, তার চেয়েও বেশি গভীর এক অন্তরঙ্গ বাস্তবতা এতে লুকিয়ে আছে। শহরের ছাদবাগানে হোক কিংবা গ্রামের উঠোনে, এখন অনেক পরিবারেই দেখা যায় এক বা একাধিক বিড়াল। কেউ সখে পালে, কেউ নিঃসঙ্গতা দূর করতে, আবার কারও কাছে বিড়াল মানেই পরিবারেরই একজন।
বাংলাদেশে আগে যেখানে কুকুর পালনের চল ছিল বেশি, এখন বিড়ালের জনপ্রিয়তা বেড়েছে হুহু করে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, একক বসবাসকারী নারীরা এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে বিড়াল যেন এক মনোবল, এক মানসিক শান্তির উৎস হয়ে উঠেছে।
ঢাকার মিরপুরে বাস করেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাদিয়া রহমান। তিনি জানান, “লকডাউনের সময় খুব একা লাগত। তখন একজন বন্ধু বিড়াল পালানোর পরামর্শ দেয়। এখন আমার ‘মিনি’ আমার দিনের শুরু আর শেষ—ওর মুখ না দেখলে মনে হয় কিছু একটা ফাঁকা।”
বিড়াল পালনে খরচ খুব বেশি নয়, যা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই থাকে। প্রতিদিনের খাবার, মাঝে মাঝে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকা, আর একটু যত্ন—এই নিয়েই চলে বিড়ালের জীবন। অনেকেই এখন বিদেশি জাতের বিড়াল আনছেন—পার্সিয়ান, সিয়ামিজ বা বেঙ্গল। তবে দেশি বিড়ালের চাহিদাও কম নয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে ‘পস কেয়ার’ নামে একটি পোষা প্রাণী ক্লিনিক চালান ডা. আব্দুল হাই। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি বিড়াল আসে চিকিৎসার জন্য। মালিকরা তাদের সন্তানের মতো খেয়াল রাখেন। একসময় ভাবতাম, এটা শুধু বিদেশে দেখা যায়। এখন দেখি বাংলাদেশও বদলে গেছে।”
বিশ্বজুড়ে বিড়াল এক সাংস্কৃতিক প্রতীকও বটে। জাপানে বিড়াল সৌভাগ্যের প্রতীক, মিশরে বিড়ালকে দেবতার আসনে বসানো হতো। ইউরোপ ও আমেরিকায় বিড়াল হিউম্যান থেরাপি বা মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বহু বছর ধরে।
বাংলাদেশে যদিও এখনো সেভাবে ‘পোষা প্রাণী অধিকার’ বা ‘পেট-ফ্রেন্ডলি পরিবেশ’ গড়ে ওঠেনি, তবুও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিড়ালপ্রেমীদের যে জোয়ার দেখা যাচ্ছে, তা উপেক্ষা করার নয়। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে প্রতিদিন হাজারো ছবি পোস্ট হয় তাদের ‘ফার বেবি’-দের নিয়ে।
একজন মনোবিজ্ঞানী, ডা. আফসানা মীম বলেন, “মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি মানসিক চাপ ও নিঃসঙ্গতার মধ্যে থাকে। বিড়াল বা অন্য পোষা প্রাণী সে শূন্যতা কিছুটা হলেও পূরণ করে। শিশু, বৃদ্ধ, এমনকি তরুণরাও এতে মানসিকভাবে স্বস্তি পায়।”
তবে বিড়াল পোষার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখা জরুরি—পর্যাপ্ত যত্ন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, এবং বিড়ালটিকে যথাযথ ভালোবাসা দেওয়া। কারণ ওরাও অনুভব করে, ওরাও ভালোবাসে।
বিড়াল এখন আর ‘ঘরের কোণে শুয়ে থাকা অলস প্রাণী’ নয়। এখন সে পরিবারের অংশ, আত্মার সহচর।