বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে। তবে গত কয়েক মাসে চিত্রটি আরও আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠেছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ইতোমধ্যেই অগ্রসর পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে চুক্তি স্বাক্ষর, জমি ইজারা এবং প্রকল্প বরাদ্দপত্র নিশ্চিত হয়েছে।
বিনিয়োগ পাইপলাইন: ধীরে ধীরে সুসংহত অগ্রগতি
বিডার কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো কেবল পরিসংখ্যান নয়; বরং আগামী ১২ থেকে ২৪ মাসের সম্ভাব্য মূলধন প্রবাহের বাস্তব চিত্র। এতে বাংলাদেশের শিল্পায়ন প্রক্রিয়া নতুন মাত্রা পাবে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) কেন্দ্র করে বিনিয়োগকারীদের বাড়তি আগ্রহও এখন স্পষ্ট।
বিডার বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য শুধু বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ানো নয়, বরং গুণগত মান ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। এসইজেড-এ বিনিয়োগকারীরা যেভাবে এগোচ্ছেন, তা আগামী কয়েক মাসেই কার্যকর ফলাফল বয়ে আনবে।”
বেজার নতুন উদ্যোগ: প্রযুক্তিনির্ভর সেবা
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) জানিয়েছে, প্রস্তাবিত বিনিয়োগের প্রায় ৬০ শতাংশ এখনো অনুসন্ধানী বা যথাযথ যাচাই-বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পগুলো নিয়ে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, প্রাথমিক আলোচনা এবং প্রকল্প পরিকল্পনার কাজ চলছে।
বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বেজা একটি ইউনিফাইড ইনভেস্টমেন্ট পোর্টাল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে জমির প্রাপ্যতা, অনুমোদনের ধাপ, বিনিয়োগের অগ্রগতি—সব তথ্য এক জায়গায় পাওয়া যাবে। বেজার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী সদস্য মো. নজরুল ইসলাম মনে করেন, এটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং بيرোক্র্যাটিক জটিলতা অনেকটাই কমাবে।
বিনিয়োগকারীরা কারা?
প্রাপ্ত বিনিয়োগ প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক ও বাংলাদেশভিত্তিক নানা প্রতিষ্ঠান। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ইপিএল (এক্সপোর্ট লিংক) অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড, প্রাইম লিফ প্রসেসিং কোম্পানি লিমিটেড, লিস টোব্যাকো মেশিনারি কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ হিজিনটোন হেয়ার প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড, হামজা ফাইবারস লিমিটেড, অ্যালায়েড টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড এবং কে কে ওয়াই ক্যানভাস লিমিটেড অন্যতম। এ ছাড়া দেশীয় অনেক প্রতিষ্ঠানও এসইজেড ঘিরে নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে।
অর্থনীতির জন্য এর তাৎপর্য
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের উৎপাদন খাতকে বৈচিত্র্যময় করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এ বিনিয়োগ প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ এলে অর্থনীতি আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগ প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সহজতর হলে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় আরও শক্তিশালী হবে। বিশেষ করে ভারত, ভিয়েতনাম বা কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রশাসনিক জটিলতা কমানো ও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়ানো এখন জরুরি।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো প্রবৃদ্ধির ধারায় আছে, যদিও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা বিদ্যমান। তবু ধারাবাহিক বিনিয়োগ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরে শিল্প খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে। বিডা ও বেজার এই উদ্যোগ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে, দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত হতে পারে।