বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, একসময় বিকেল হলেই যেখানে জড়ো হতেন সব বয়সী মানুষ, সেখানে এখন ইট-কাঠের দোকান আর দখলের গল্প। সিটি কর্পোরেশনের নীরবতা, বেসরকারি প্রকল্পের লাগামহীনতা আর সবুজের ওপর নির্মম আঘাতে বিনাশ হযে গেছে মুক্ত বিনোদনকেন্দ্রটি।
২০১৮ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা দিয়েছিল, ‘সোল স্কোয়ার-প্রাণের স্পন্দন’ নামে আধুনিকায়ন হবে বিপ্লব উদ্যান। এক বছরের মধ্যে তৈরি হবে নাগরিক বিনোদনের নানা সুবিধা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিফর্ম কনসোর্টিয়াম-কে। এলাকাবাসী আশায় বুক বাঁধলেও বাস্তবতা হয়েছে উল্টো।
প্রকল্প শুরুর পরই কর্পোরেশনের প্রশ্রয়ে দখল হয়ে যায় পার্কের তিন পাশের ফুটপাত ও পানি নিষ্কাশনের নালা। পথচারীরা বাধ্য হচ্ছেন ঝুঁকি নিয়ে সড়কে হাঁটতে। দখলের নামে বোজানো হয় নালা, পার্কের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলা হয় সেই জায়গা। একই সঙ্গে শুরু হয় বৃক্ষ নিধন। বহু পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়, কিছু মরে গেছে অনাদরে। উত্তর-পূর্ব কোণে শৌচাগার গড়ে উঠেছে গাছ কেটে, যেটি ছিল একসময় সবুজের আবরণে ঢাকা।
আরেকদিকে, পূর্ব পাশে গড়ে ওঠে বিশাল দোকানপট্টি। চুক্তিতে ১৫০ বর্গফুটের দোকান নির্মাণের কথা থাকলেও বাস্তবে তা বাড়িয়ে ২০০ বর্গফুট করা হয়, এবং অনেক দোকান গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে জনসাধারণের বিনোদনের জায়গা কার্যত হারিয়ে গেছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। অপূর্ণ রয়েছে পার্কের সৌন্দর্যবর্ধনের মূল অংশ, কেবল দোকানপাটই দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে।
সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করে বলেন, “বিপ্লব উদ্যান থেকে ১০-১২ কোটি টাকা লোপাট করেছেন সাবেক মেয়ররা। মেজর জিয়াউর রহমানের স্মৃতিকে মুছে দিতে স্থাপনা নির্মাণের নামে এসব করা হয়েছিল। তবে আমি ঘোষণা দিয়েছি-বিপ্লব উদ্যানকে সবুজ উদ্যানে রূপান্তর করা হবে।”
২০১৮ সালে তৈরি করা ২১টি দোকান এখনও আছে বহাল তবিয়তে। পরিবেশবাদীরা জোরালোভাবে দাবি করছেন:দোকানগুলো ভেঙে পার্কের পূর্ব পাশে আগের মত খোলা জায়গা ফিরিয়ে দিতে হবে।
গত বছর আগস্টে ‘রিফর্ম কনসোর্টিয়াম’-এর সঙ্গে নতুন করে ২৫ বছরের চুক্তি করে সিটি কর্পোরেশন। এর আগেও ২০১৮ সালে ছিল ২০ বছরের একটি চুক্তি। মাঝে চুক্তি সংশোধন হলেও প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি। বরং ২০২০ সালে তৎকালীন প্রশাসক খোরশেদ আলম দোতলা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সবকিছু আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে।
নগরবাসীর প্রশ্ন: এই কি তবে উন্নয়ন?
একটি ঐতিহাসিক পার্ক, যেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী ও নাগরিক অবসর সময়ের কেন্দ্রবিন্দু তা কি বাণিজ্যিক স্বার্থে বিসর্জন যাবে? সিটি কর্পোরেশন কি পারবে উদ্যানকে পুনরায় নাগরিকদের হাতে ফিরিয়ে দিতে?
📢 আপনিও কি বিপ্লব উদ্যানের এমন রূপান্তরে ক্ষুব্ধ? নিচে মন্তব্য করুন এবং প্রতিবেদনটি শেয়ার করে সচেতনতা গড়ে তুলুন।
📌 সিটি কর্পোরেশনের প্রতি অনুরোধ: জনস্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।