Home চট্টগ্রাম ঐতিহাসিক পার্কে বাণিজ্যিক উৎসব, প্রশ্নের মুখে সিটি করপোরেশন

ঐতিহাসিক পার্কে বাণিজ্যিক উৎসব, প্রশ্নের মুখে সিটি করপোরেশন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: ষোলশহর দু’নম্বর গেইট এলাকায় অবস্থিত বিপ্লব উদ্যানের সবুজে ঘেরা প্রান্তর এখন বিপদের মুখে। উদ্যানের মাঝখানে বসানো হয়েছে বিশাল লোহার চাকতি, পাশাপাশি নাগরদোলা, রোলারকোস্টারসহ নানা রাইড বসানোর কাজ। খোলা জায়গায় গড়ে উঠছে ৩৬টি অস্থায়ী দোকানের কাঠামো। চলতি মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই বিজয় মেলা’, যা ১৫ দিনব্যাপী চলবে।

‘ছাত্রসমাজ চট্টগ্রাম মহানগর’ নামে আয়োজিত এ মেলার প্রস্তুতি গত বুধবার রাত থেকে শুরু হয়েছে। তবে নগর পরিকল্পনাবিদরা উদ্যানের বাণিজ্যিক ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে কঠোর সমালোচনা করে এই কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও নগর-পরিকল্পনা বিভাগের ডিন অধ্যাপক মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, “বিপ্লব উদ্যানে কিছুদিন আগে নাগরিকদের মতামত উপেক্ষা করে কংক্রিটের স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। নতুন মেয়র আসার পর আমরা আশা করেছিলাম সেগুলো সরিয়ে দিয়ে সবুজ জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তার পরিবর্তে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে নাগরিকদের মুক্ত স্থান হারিয়ে যাচ্ছে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।”

১৯৭৯ সালে ব্যস্ততম ২ নম্বর গেটে দুই একরের জায়গায় গড়ে তোলা হয় বিপ্লব উদ্যান। এরপর বিভিন্ন সময়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হলেও, ২০২৪ সালের শেষ দিকে কিছু ভেঙে সমান করা হয়। দু’ নম্বর গেট, প্রবর্তক, জিইসি ও আশপাশের মানুষ সকালে শরীরচর্চা ও অবসর কাটাতে উদ্যানে আসেন।

 বর্তমানে উদ্যানের মাঠের মাঝখানে রাইড বসানোর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ চলছে। উদ্যানের তিন পাশে বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী দোকানের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লোহার খুঁটি, বাঁশ, রাইডের যন্ত্রাংশ দেখা যায়।

মেলার জন্য সিটি করপোরেশন থেকে দুই লাখ টাকা রাজস্ব দিয়ে অনুমতি নেওয়া হয়েছে, যার অনুমোদন দিয়েছেন মেয়র নিজেই। অনুমতি নিয়েছেন আলিফ উদ্দিন নামে একজন, যিনি ‘ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে আয়োজন করছেন। মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, এটি শুধুমাত্র ছবি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে এবং অন্যান্য মেলা আয়োজনের অনুমতি নেই।

নাগরিক অধিকারের সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী এ ধরনের আয়োজনকে উদ্যান ধ্বংসের চেষ্টায় পরিণত হওয়া বলছেন। তিনি বলেন, “বিপ্লব উদ্যান নাগরিকদের শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ও বসার একটি স্থান। এখন সেখানে ইট-কাঠের দোকান গড়ে উঠছে, যেখানে আগে বিকেল হলেই সব বয়সী মানুষ জমায়েত হতেন। সিটি কর্পোরেশনের নীরবতা ও বেসরকারি প্রকল্পের অনিয়ন্ত্রণের ফলে সবুজ বিনোদনকেন্দ্রটি বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ‘সোল স্কোয়ার-প্রাণের স্পন্দন’ নামে বিপ্লব উদ্যান আধুনিকায়নের ঘোষণা দিয়েছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রিফর্ম কনসোর্টিয়ামকে। প্রকল্প শুরুর পরই পার্কের তিন পাশের ফুটপাত ও পানি নিষ্কাশনের নালা দখল হয়, পথচারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে চলাচল করতে বাধ্য হন। বহু পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়, কিছু গাছ অনাদরে মরে যায়। শৌচাগার নির্মাণ ও বাণিজ্যিক দোকানপট্টি গড়ে ওঠে, যা পার্কের খোলা জায়গা কমিয়ে দেয়।

দোকানগুলো ভাঙার দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা। ২০২০ সালে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।

একটি ঐতিহাসিক পার্ক, যা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী এবং নাগরিক অবসর কেন্দ্র ছিল, এখন বাণিজ্যিক স্বার্থে হারিয়ে যেতে পারে—এই শঙ্কা রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কি পারবে বিপ্লব উদ্যানকে আবার নাগরিকদের জন্য মুক্ত ও সবুজ স্থান হিসেবে ফিরিয়ে দিতে