বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, শ্রীমঙ্গল: বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় চায়ের জন্য ২০২৫ সাল ছিল এক ‘রূপান্তরের বছর’। এ বছর একদিকে যেমন বৈশ্বিক বাজারদর অস্থির ছিল, তেমনি নতুন ধরনের চায়ের (Specialty Tea) জয়জয়কার দেখা গেছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্যমতে, ২০২৫ সালে বিশ্ব চায়ের বাজারের আকার প্রায় ৫৬.২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
স্বাস্থ্য সচেতনতা: এ বছর সাধারণ কালো চায়ের চেয়ে গ্রিন টি, হারবাল টি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ চায়ের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘রেডি-টু-ড্রিঙ্ক’ (RTD) বা ঠান্ডা চায়ের (Iced Tea) জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
বিশাল ভোক্তা গোষ্ঠী: চীন ও ভারত যথারীতি উৎপাদন ও ভোগের শীর্ষে থাকলেও, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকায় চায়ের বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে।
২০২৫ সালে চায়ের নিলাম মূল্য বা বাজার দর খুব একটা স্থিতিশীল ছিল না।
নিম্নমুখী নিলাম দর: ভারত ও কেনিয়ার মতো বড় উৎপাদনকারী দেশগুলোতে চায়ের নিলাম দর গত বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে (গড়ে কেজি প্রতি প্রায় ৭.৬% পর্যন্ত হ্রাস)। এর ফলে বাগান মালিকদের আয় কমেছে।
বাড়তি খরচ: সার, শ্রমিকের মজুরি এবং পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ। ফলে দর পতনের কারণে অনেক বাগান আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে।
২০২৫ সালে চা শিল্পের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্রকৃতি।
তীব্র দাবদাহ ও অনিয়মিত বৃষ্টি: দক্ষিণ এশিয়া (ভারত ও বাংলাদেশ) এবং পূর্ব আফ্রিকায় দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ ও অতিবৃষ্টির ফলে চায়ের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ভারতের দার্জিলিং অঞ্চলে উৎপাদন প্রায় ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
শ্রমিক সংকট: বাগানগুলোতে দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং মানবেতর জীবনযাপন চা শিল্পের একটি দীর্ঘস্থায়ী সংকট হিসেবে এ বছরও আলোচনায় ছিল।
সংকট থাকলেও বিদায়ী বছরটি কিছু ইতিবাচক দিকও উন্মোচন করেছে:
প্রিমিয়ামাইজেশন: এখন মানুষ সাধারণ চায়ের বদলে দামী ও মানসম্মত ‘স্পেশালিটি টি’ বা ‘জৈব চা’ (Organic Tea) কিনতে আগ্রহী। এই খাতে মুনাফা অনেক বেশি।
ই-কমার্স ও প্রযুক্তি: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরাসরি বাগান থেকে গ্রাহকের কাছে চা পৌঁছে দেওয়ার প্রবণতা এ বছর ব্যাপক বেড়েছে।
সাসটেইনেবিলিটি: পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ এবং প্লাস্টিকমুক্ত টি-ব্যাগের ব্যবহার ২০২৫ সালে চা শিল্পের নতুন মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের জন্য ২০২৫ সাল ছিল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বছর। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ১৪০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তা বাস্তবায়নে উত্তরবঙ্গ ও সিলেটের বাগানগুলোতে কর্মতৎপরতা দেখা গেছে। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা (প্রায় ১৩০ মিলিয়ন কেজি) দ্রুত বাড়তে থাকায় রপ্তানি বাজার কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
২০২৫ সাল শেষে চা শিল্প এখন একটি মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা, অন্যদিকে উচ্চমূল্যের বিশেষায়িত চায়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা। আগামী ২০২৬ সালে এই শিল্পের টিকে থাকা নির্ভর করবে টেকসই চাষাবাদ পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর।
এ ধরণের আরও গুরুত্বপূর্ণ আপডেট পেতে ভিজিট করুন www.businesstoday24.com










