সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) চাই: বিসিএসএ
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের কার্যবিবরণীতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাদ পড়ার অভিযোগ জানিয়েছে বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) । সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট (এসএলএ) চালুর বিষয়ে বৈঠকে ঐকমত্য হলেও তা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত নথিতে উল্লেখ না থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আলোচ্য বৈঠকটির আনুষ্ঠানিক কার্যবিবরণি ১৭ মে, ২০২৫ তারিখে প্রকাশ করা হযেছে। সেখানে হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও এসএলএ সংক্রান্ত বিষয়টি নেই, বাদ পড়েছে। বিসিএসএ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০ মে, ২০২৫ পত্র পাঠায়। একই বিষয়ে গত ৭ জুলাই আবারও বিসিএসএ পত্র দিয়েছে মন্ত্রণালয়কে।
বিসিএসএ উল্লেখ করেছে যে এসএলএ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই কেবল বন্দরের কার্যক্রমে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। এসএলএ অনুপস্থিতি একটি বড় প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। বর্তমানে বার্থ, টার্মিনাল ও শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটররা শিপিং এজেন্টদের অর্থায়নে সেবা দিলেও কোনো কার্যকর চুক্তি না থাকায় সেবা ব্যর্থ হলেও কেউ দায় স্বীকার করে না বা ক্ষতিপূরণ দেয় না। কার্যতঃ বাড়তি চার্জের বিষয়টি তারা মেনে নিয়েছিলেন এসএলএ চালুর শর্তে।
বিসিএসএ সূত্রে জানা যায়, এসএলএ-র যে খসড়া তারা দিয়েছে তাতে বার্থ উৎপাদনশীলতা প্রতি ক্রেনে ঘণ্টায় ১০ মুভ নিশ্চিত করা, এসডিআর/ সিডিআর ইস্যু দ্রুত সমাধান, নিয়মিত অপারেশন নিশ্চিত করা, ২০২৭ সাল পর্যন্ত চার্জ স্থিতিশীল রাখা ইত্যাদি রয়েছে।
বন্দরের বার্থ হ্যান্ডলিং চার্জ বৃদ্ধি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে ওই বৈঠকটি হয়েছিল । এসোসিয়েশনের অভিযোগ, জেনারেল কার্গো বার্থ-এর কিছু অপারেটর গত মার্চে একতরফাভাবে প্রতি কন্টেইনারে ৫ মার্কিন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬২৫ টাকা হারে বাড়তি চার্জ দাবি করেন, যা বিদ্যমান হারের তুলনায় ১১২ শতাংশ অধিকতর। সেই সাথে ধীরে চল কৌশল অবম্বন করে উৎপাদনশীলতা মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। আর তা শিপিং লাইন ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে উদ্বেগ ও অসন্তোষ তৈরি করে।
এই প্রেক্ষাপটে বন্দর প্রশাসন ৯ মার্চ, ২০২৫ স্টেকহোল্ডারদের বৈঠকে ডাকে। সেখানে শিপিং এজেন্টরা বিদ্যমান হারের ৬০ শতাংশ অংশের ওপর ১০ শতাংশ হারে বাড়তি চার্জ (প্রতি ইউনিটে ৩৩.৫৭ টাকা) প্রদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে একতরফাভাবে প্রতি ইউনিটে ২০৫ টাকা হারে চার্জ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএসএ) প্রতি ইউনিটে ৫০.৩৬ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও তাতেও সাড়া মেলেনি।
বাড়তি মাশুল আদায়ে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে অপারেটররা অতীতের বিভিন্ন সময়ের মত গো-স্লো করতে থাকেন। এই পর্যায়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়ে ৬ মে, ২০২৫ সমন্বয় সভা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে প্রতি কনটেইনারে বার্থ হ্যান্ডলিং চার্জ ১৭৫ টাকা বৃদ্ধি এবং বার্থ অপারেটর ও শিপিং এজেন্টদের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট -এসএলএ চালুর বিষয়ে ঐকমত্য হয়। তা চালুর মূল উদ্দেশ্য ছিল সেবার মান নিশ্চিত করা, জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং পারফরম্যান্স ভিত্তিক পরিবেশ গড়ে তোলা। প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে বন্দর চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৪ মে এসএলএ-এর সম্ভাব্য শর্তাবলির বিস্তারিত বন্দর প্রশাসনকে দেয় বিসিএসএ।