Home বিনোদন বৃষ্টির দিনে দেখা: শেষ পর্ব

বৃষ্টির দিনে দেখা: শেষ পর্ব

শেষ লকেটের আলো, মুক্তির পথ

স্মৃতি হাসান

দরজা খুলে যে মানুষটি দাঁড়িয়েছিল, তাকে দেখে আনুপমের চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল।
ওই বৃদ্ধ ব্যক্তিকে শহরের সবাই চিনে—ফয়’স লেকের পুরনো কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান। বহু বছর ধরে তাকে কেউ ঠিকমতো দেখেনি। অনেকেই ভেবেছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তিনি দাঁড়িয়ে আছেন, হাতে টর্চলাইট, মুখে গভীর ক্লান্তির রেখা।

“তোমাদের মায়ের কথা আমি জানতাম,” বৃদ্ধ বললেন—“সে সত্য লুকাতে চেয়েছিল, আর সেই জন্যই তারা তাকে খুন করে। তোমরা যা পেয়েছ, সেটা শুধু লকেট নয়, পুরো চক্রের হিসাবপত্রের চাবি।”

এই কথা বলতেই মেয়েটির গলা কেঁপে উঠল। অনুপমও যা বুঝছিল, তা এখন পুরোপুরি পরিষ্কার।
এই লকেট দুটির ভেতরে থাকা চিহ্নগুলো মিলে যায়। অর্থাৎ যখন এগুলো একসাথে ধরা হবে, তখন ভেতরের লুকানো মাইক্রোফিল্ম দৃশ্যমান হবে। আর সেখানে রয়েছে—

এই শহরের একটি উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি সিন্ডিকেটের নাম, লেনদেন আর অপরাধের নথি।

বৃদ্ধ মান্নান হাত বাড়িয়ে বললেন, “আমাকে দাও। এটা প্রকাশ করতে হবে। আর তোমাদের দুজনকে বাঁচাতে হলে এখনই এখান থেকে বের হতে হবে।”

ঠিক তখনই পুরনো ভবনটি কেঁপে উঠল। বাইরের লোকগুলো ভেতরে ঢুকে পড়েছে। পায়ের শব্দ, চিৎকার, গুলি ভাঙার আওয়াজ—সব একসাথে ছুটে আসছে। মুহূর্তটির উত্তেজনা এমন যে বাতাস পর্যন্ত কাঁপছে।

বৃদ্ধ তাড়াতাড়ি তাদের একটি গোপন পথ দেখিয়ে দিলেন।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে নিচে একটা সঙ্কীর্ণ সুড়ঙ্গ। ওপারে শহরের পুরনো রেললাইনের পাশে খোলা জায়গা।
কিন্তু বৃদ্ধ নিজে ফিরে গেল মূল ভবনের দিকে।
তার শেষ কথা ছিল,
“তোমরা বাঁচো। তোমরাই বলবে সত্যটা।”

সুড়ঙ্গের শেষে এসে তারা থামতেই দূরে একটা প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেল। ভবনটা ভেঙে পড়ছে।
মেয়েটি চোখ ভিজে আসা কণ্ঠে বলল, “উনি… ফিরে গেলেন। আমাদের জন্য।”

অনুপম বলল,
“এই লকেটের আলো আর এই সত্যের জন্যই এত মৃত্যু। এখন এটা আমরা চিরকাল চাপা রাখতে পারি না।”

সুন্দর সকাল ফোটার আগ মুহূর্তে দুজন দাঁড়িয়ে রইল রেললাইনের পাশে ভেজা বাতাসে।
দূরে ভোরের আলো উদয় হচ্ছে।
হাতে ধরা যুক্ত হওয়া দুই লকেট থেকে বেরিয়ে আসছে ছোট্ট দীপ্তিময় আলো—একটি নতুন শুরুর প্রতীক।

তারা হাঁটতে শুরু করল।
রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পুলিশ, যাদের নাম ফিল্মে রয়েছে, তাদের মুখোশ খুলবে।
ফয়েজ লেকের রাতের অন্ধকারে যে ইতিহাস লুকোনো ছিল, সেটাই এখন নতুন দিনের আলোয় প্রকাশ পাবে।

এইভাবেই শেষ হলো “ফয়’স লেকের রহস্য” সিরিজ।
পাঠকের সাড়া না থাকলে এই গল্প আজ এখানে আসত না।