Home Third Lead কান্নায় ভিজেছে টেমস: লন্ডনে শোকের ছায়া, অশ্রুসিক্ত প্রবাসীরা

কান্নায় ভিজেছে টেমস: লন্ডনে শোকের ছায়া, অশ্রুসিক্ত প্রবাসীরা

৮ জানুয়ারি, ২০২৫। লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেগম জিয়া

আজহার মুনিম শাফিন, লন্ডন: 

লন্ডনের ধূসর আকাশ আজ যেন আরও বেশি বিষণ্ণ। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে সময় যখন থমকে দাঁড়াল, তখন বিলেতের প্রতিটি কোণে পৌঁছে গেছে সেই দুঃসংবাদ—বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে লন্ডনের হিথ্রো থেকে ব্রিক লেন, সর্বত্র এক গভীর স্তব্ধতা নেমে আসে। প্রবাসীদের মধ্যে তৈরি হয় এক হাহাকারময় পরিবেশ।

পূর্ব লন্ডনের যেসব ক্যাফেতে প্রতিদিন রাজনৈতিক তর্করত মানুষের ভিড় থাকত, সেখানে আজ কেবল নিস্তব্ধতা। অনেকেই খবরটি শোনার পর স্তব্ধ হয়ে বসে পড়েন। কারো হাতে থাকা স্মার্টফোনে তখন জ্বলজ্বল করছে নেত্রীর সাদাকালো ছবি। দলমত নির্বিশেষে অনেক প্রবাসীকেই দেখা গেছে চোখ মুছতে। বিলেতের কনকনে ঠান্ডাতেও শত শত মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন কিংস্টন কিংবা বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে, যেখানে বেগম জিয়ার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের স্মৃতিগুলো এখনো অমলিন।

লন্ডনের সাধারণ প্রবাসীরা এই শোক সইতে পারছেন না। ইলফোর্ড নিবাসী প্রবীণ প্রবাসী আব্দুল মতিন অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন:”তিনি ছিলেন আমাদের সাহসের বাতিঘর। যখনই দেশের কথা ভাবতাম, উনার হাসিমুখটা চোখে ভাসত। আজ মনে হচ্ছে আমরা বিলেতে এতিম হয়ে গেলাম। এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল।”

পিকাডিলি সার্কাসে কাজ করা তরুণ প্রবাসী ফাহিম আহমদ বলেন: “আমি ওনার রাজনীতির আদর্শ পুরোপুরি বুঝতাম কি না জানি না, কিন্তু দেশনেত্রী হিসেবে ওনার প্রতি আমাদের যে টান ছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। লন্ডনে খবরটা আসার পর থেকে আমার পরিচিত অনেককেই দেখছি কাজ বন্ধ করে শোক পালন করছেন।”

লন্ডনস্থ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অত্যন্ত শোকাবহ পরিবেশে কালো ব্যাজ ধারণ করেছেন। বিভিন্ন মসজিদে আজ উনার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। কেবল রাজনৈতিক কর্মী নন, সাধারণ গৃহিণীরাও ঘরে বসে কোরআন তেলাওয়াত করে প্রিয় নেত্রীর জন্য দোয়া করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লন্ডনের হাজার হাজার বাঙালির প্রোফাইল পিকচার এখন কালো ফ্রেমের শোকবার্তায় মোড়ানো।

লন্ডন থেকে প্রবাসীরা এখন টেলিভিশনের পর্দার দিকে চেয়ে আছেন। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা আর কারাবন্দী জীবনের সেই কষ্টগুলোর কথা মনে করে অনেককেই আক্ষেপ করতে দেখা গেছে। প্রবাসীরা বলছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের চিরবিদায়ের মাধ্যমে একটি যুগের অবসান হলো। টেমস নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে একজন প্রবাসীকে বলতে শোনা গেল, “ম্যাডাম চলে গেলেন, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে তিনি সারাজীবন ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ হয়েই থাকবেন।”