Home আন্তর্জাতিক ব্রিটেনের ‘কারি সাম্রাজ্য’: সিলেটি বাংলাদেশিরাই চালিকাশক্তি

ব্রিটেনের ‘কারি সাম্রাজ্য’: সিলেটি বাংলাদেশিরাই চালিকাশক্তি

Brick Lane is a street in the London borough of Tower Hamlets. It is famous for its many curry houses.
আজহার মুনিম, লন্ডন: ব্রিটেনের রাস্তায় হাঁটলেই চোখে পড়ে ‘ইন্ডিয়ান রেস্তোঁরা’র ঝলমলে সাইনবোর্ড। কিন্তু এই নামের আড়ালে যে রয়েছে এক অভিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিশ্রম, সাহস ও সাংস্কৃতিক অভিযোজনের ইতিহাস তা অনেকেই জানে না। ব্রিটেনে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজারের বেশি ইন্ডিয়ান রেস্তোঁরা রয়েছে, যার ৯৫ শতাংশই পরিচালিত হয় বাংলাদেশি, বিশেষ করে সিলেটি বংশোদ্ভূতদের দ্বারা। এ যেন শুধুই রন্ধনশিল্প নয়, এক অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক বিজয়।
একটি অভিবাসনযাত্রা থেকে একটি রন্ধনশিল্প:
১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে ব্রিটেনে পা রাখেন হাজার হাজার সিলেটি যুবক। প্রথমদিকে ছিলেন জাহাজ শ্রমিক বা কাপড়ের কারখানার কর্মী। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা যুক্ত হন খাবার ব্যবসায়। ব্রিটিশদের জন্য উপযোগী করে পরিবেশন করতে থাকেন মসলা-মাখানো কারি, তন্দুরি, বিরিয়ানি ও কাবাব।
তারা ‘ইন্ডিয়ান’ রেস্তোঁরা নামেই ব্যবসা করলেও খাবারের আসল স্বাদ ও রন্ধনপ্রণালী ছিল সম্পূর্ণ বাংলাদেশি, বিশেষ করে সিলেটি ঘরানার। আজকের দিনে ব্রিটেনে ‘ইন্ডিয়ান ফুড’ মানেই আসলে ‘সিলেটি বাংলাদেশিদের ফুড কালচার’। এই ‘কারি ইন্ডাস্ট্রি’ এখন ৪ বিলিয়ন পাউন্ডের বাজার। প্রায় এক লক্ষের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এখানে।
জাতীয় খাবার হয়ে উঠল চিকেন টিক্কা মাসালা:
ব্রিটিশরা ‘চিকেন টিক্কা মাসালা’কে আজ নিজের খাবার বলে দাবি করে। একে বলা হয় ‘ব্রিটেনের জাতীয় খাবার’। কিন্তু এই খাবারের উৎপত্তি মূলত গ্লাসগোতে এক সিলেটি রেস্তোঁরায়। একজন গ্রাহক শুকনো চিকেন টিক্কা খেয়ে অভিযোগ করলে রাঁধুনি তাতে টমেটো সস, ক্রিম আর মশলা দিয়ে এক নতুন খাবার বানান সেখান থেকেই জন্ম নেয় আজকের ‘চিকেন টিক্কা মাসালা’।
এখন এই খাবার শুধু ব্রিটেনের পাবে বা রেস্তোঁরায় নয়, পাওয়া যায় সুপারমার্কেট, স্কুল ক্যাফেটেরিয়া এমনকি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মেনুতেও।
কারি শুধু খাবার নয়, ব্রিটিশ সংস্কৃতির অংশ:
ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিক ‘কারি নাইট’ এখন ব্রিটিশদের সামাজিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। শুক্রবার রাতে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে কারি খেতে যাওয়া এখন একধরনের রীতিতে পরিণত হয়েছে।
একে শুধু রেস্তোঁরা ব্যবসা না বলে বরং “কারি কালচার” বলাই বেশি সঠিক। ব্রিটেনে এখন প্রতিবছর কারি উৎসব, কারি অ্যাওয়ার্ড ও কারি মাস পালিত হয়।
বাংলাদেশের জন্যও গর্বের:
ব্রিটেনে বসবাসরত সাড়ে পাঁচ লক্ষের বেশি বাংলাদেশির মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই সিলেটি, এবং তাদের একটা বড় অংশ এই রন্ধনশিল্পের সঙ্গে জড়িত। তারা কেবল অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভরই নয়, ব্রিটেনে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ও তুলে ধরেছেন খাবারের মাধ্যমে।
এই সাফল্য শুধু অভিবাসীদের গল্প নয়, বরং এক জাতিগত ঐতিহ্যকে নতুন দেশে নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত করার অনন্য উদাহরণ।

🔎 আপনিও কি ব্রিটেনে বসবাসরত কোনো সিলেটি রন্ধনশিল্পীর গল্প জানেন? আমাদের জানান মন্তব্যে।

🍛 বাংলাদেশি খাবার কীভাবে বিশ্বজয় করছে এমন আরও প্রতিবেদন পেতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

📢 এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন, যাতে বিশ্ব জানে সিলেটিদের অবদান!

📝 আপনার প্রিয় ‘কারি রেস্তোঁরার’ অভিজ্ঞতা আমাদের ইনবক্সে পাঠান, নির্বাচিত গল্প প্রকাশিত হবে বিজনেসটুডে২৪-এ