Home First Lead ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি, মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার (১০ মে) ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর দুই দেশ এই ঐকমত্যে পৌঁছায় বলে জানান তিনি।

 দক্ষিণ এশিয়ায় টানটান উত্তেজনার পর ভারত ও পাকিস্তান একযোগে পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের কথা প্রথম ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি জানান, “দীর্ঘ এক রাতের কূটনৈতিক আলোচনার পর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প Truth Social-এ দেওয়া বার্তায় দুই দেশের এই সিদ্ধান্তকে “সাধারণ বুদ্ধিমত্তা ও চমৎকার কৌশলগত বিবেচনার” ফল বলে অভিহিত করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার কয়েক মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “পাকিস্তান সবসময় আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে ছিল এবং থাকবে। তবে সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডীয় অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।”

পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি নয়াদিল্লিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারত সরকারের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “ভারত সরকার নিশ্চিত করছে যে পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম—স্থল, আকাশ ও জলপথে তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এটি কূটনৈতিক আলোচনার ফল এবং উভয় দেশের উত্তেজনা প্রশমন চাওয়ার ইঙ্গিত।”

যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা:

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স সরাসরি পাকিস্তান ও ভারতের উচ্চপদস্থ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, সেনাপ্রধান আসিম মুনির, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও আসিম মালিক।

রুবিও বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান এখন একটি নিরপেক্ষ স্থানে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক সংলাপ শুরু করতে সম্মত হয়েছে।”

উত্তেজনার পটভূমি:

এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে এমন এক সময়, যখন দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা তীব্র রূপ নিয়েছিল। ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যার দায় ভারত পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীর ওপর চাপায়। পাকিস্তান অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। এরপরই ভারত ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে, পাকিস্তানি ভিসা বাতিল করে এবং ইন্দাস পানি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান একে “যুদ্ধের ঘোষণা” বলে উল্লেখ করে।

৬ ও ৭ মে পাকিস্তানের মুজাফ্‌ফরাবাদ ও বাহাওয়ালপুরে বিস্ফোরণের পর ইসলামাবাদ অভিযোগ করে ভারত বিমান হামলা চালিয়েছে। প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ‘বুনিয়ান-উন-মারসুস’ অভিযান শুরু করে এবং দাবি করে তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান (চারটি রাফালসহ) ভূপাতিত করেছে। ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থাও রাফাল ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করেছে।

পাকিস্তান আরও দাবি করেছে, তারা ৭৭টি ইসরায়েলি হারপ ড্রোন প্রতিহত করেছে এবং ‘আল-ফাতাহ’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

ভবিষ্যতের ইঙ্গিত:

যদিও পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি, তবু এই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার পথে একটি বড় ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জি৭ দেশগুলো দুই দেশের মধ্যে স্থায়ী সংলাপ শুরুর আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে কূটনৈতিক সমঝোতা ও গণতান্ত্রিক সদিচ্ছার মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান যদি শান্তির পথে অগ্রসর হয়, তবে পুরো অঞ্চলের জন্য এটি এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিরও ভূমিকা রয়েছে। তিনি জিও নিউজকে বলেন, “আমরা যৌথভাবে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছি, তবে তুরস্ক ও যুক্তরাজ্যের শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে আমার কথোপকথনে এটি সম্ভব হয়েছে। আজ অনেকটা ‘হোয়াটসঅ্যাপ কূটনীতি’ হয়েছে বলা চলে।”

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর এক্স (সাবেক টুইটার)-এ জানান, “ভারত ও পাকিস্তান গুলিবিনিময় ও সামরিক পদক্ষেপ বন্ধে একটি সমঝোতায় পৌঁছেছে।”

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী বলেন, “আজ বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তানের ডিজিএমও ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গুলিবিনিময় এবং সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা বিকেল ৫টা (ভারতীয় সময়) থেকে কার্যকর হয়েছে।”

তিনি জানান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দুই দেশের সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।