দিল্লিতে বাংলাদেশ হাউজ ঘেরাও ও শিলিগুড়িতে ভাঙচুরের জেরে সিদ্ধান্ত
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাউজের সামনে চরমপন্থি হিন্দু সংগঠনের নজিরবিহীন বিক্ষোভ, হাইকমিশনারকে হুমকি এবং শিলিগুড়িতে ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে দিল্লিতে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে আগরতলা মিশনেও ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুই প্রতিবেশী দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক এক চরম তিক্ততার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।
দিল্লির সুরক্ষিত জোনে ‘নিরাপত্তা ঘাটতি’
গত শনিবার রাতে দিল্লির কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টিত চাণক্যপুরী কূটনৈতিক এলাকায় ‘অখণ্ড হিন্দু রাষ্ট্রসেনা’র ব্যানারে একদল উগ্রপন্থি বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাউজের মূল ফটকে পৌঁছে যায়। তারা নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং হাইকমিশনারকে লক্ষ্য করে কুরুচিপূর্ণ গালমন্দ ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে একে ‘গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, স্যানিটাইজড এলাকায় কীভাবে একটি উগ্রবাদী দল এতদূর পৌঁছাতে পারল? উপদেষ্টা আরও জানান, হামলার সময় হাইকমিশনার ও তাঁর পরিবার চরম আতঙ্কিত ছিলেন এবং সেখানে নিয়োজিত গার্ডরা নীরব ভূমিকা পালন করেছেন।
শিলিগুড়িতে ভাঙচুর ও কলকাতার উত্তেজনা
দিল্লির ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সোমবার পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসা কেন্দ্রে হামলা ও ভাঙচুর চালায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘ডিইউডিজিটাল’ পরিচালিত ওই ভিসা কেন্দ্রটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কলকাতার পার্ক সার্কাসে অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনেও ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা উপ-হাইকমিশন ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। এছাড়া আসামের অন্তত ৫০টি স্থানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর খবর পাওয়া গেছে।
পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কূটনৈতিক টানাপড়েন
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল দিল্লিতে হামলার খবরকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা’ বলে দাবি করেছেন। দিল্লির প্রেস নোটে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিল্লির এই দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বাংলাদেশ বলছে, আন্তর্জাতিক ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত ব্যর্থ হয়েছে।
সেবার ওপর প্রভাব
নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশন ফটকে নোটিশ ঝুলিয়ে কনস্যুলার ও ভিসা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ী ভারত ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত এই অচলাবস্থা কাটছে না।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে যে, ময়মনসিংহের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেভাবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে উগ্রবাদী প্রচারণা ও হামলা চালানো হচ্ছে, তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য হুমকিস্বরূপ।










