Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য কারবালা থেকে নূহের নৌকা: মহররমের স্মরণীয় ৬ ঘটনা

কারবালা থেকে নূহের নৌকা: মহররমের স্মরণীয় ৬ ঘটনা

মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। এটি কেবল নতুন বছরের সূচনা নয়, বরং ইসলামের ইতিহাসে একটি গভীর বেদনার মাস হিসেবেই স্মরণীয়। বিশেষ করে ১০ মহররম, যাকে ‘আশুরা’ বলা হয়। এই দিনটিতে ঘটেছে এমন কিছু ঘটনা, যা বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে গেছে।

মহররম মাসকে ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। এই মাসে সংঘটিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে এর মর্যাদা আরও বেড়েছে। ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, এই মাসে দোয়া, ইবাদত, রোজা, তাওবা ও আত্মশুদ্ধির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

কারবালার প্রান্তরে এক নজিরবিহীন আত্মত্যাগ

মহররমের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ও স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে ৬১ হিজরির ১০ তারিখে—কারবালার প্রান্তরে। মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থেকে শাহাদাত বরণ করেন। ইয়াজিদের খেলাফতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন, বরং সত্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন।

ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর সাথীদের মৃত্যুর মাধ্যমে মুসলিম জগতে ন্যায়, ত্যাগ, শোক ও প্রতিরোধের এক অমর বার্তা পৌঁছে যায়। কারবালার এ ঘটনার স্মরণে মুসলিম বিশ্বে মহররম পালন করা হয় গভীর শোক ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে। বিশেষত শিয়া সম্প্রদায় এই মাসকে কেন্দ্র করে বিশাল শোকানুষ্ঠানের আয়োজন করে।

অতীতের নবী ও রসুলদের ঘটনাবলি

কারবালার ঘটনাই একমাত্র নয়; ইসলামি ইতিহাস অনুযায়ী, আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এই মহররম মাসে সংঘটিত হয়েছে।

  • হযরত মুসা (আ.) এই দিনে বনি ইসরাইলকে নিয়ে ফেরাউন থেকে মুক্তি পান এবং লোহিত সাগর পেরিয়ে নিরাপদে পৌঁছান। ফিরাউন ও তার সেনারা সাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনার স্মরণে আশুরার রোজার প্রচলন হয়, যা পরবর্তীতে ঐচ্ছিক রোজা হিসেবে রয়ে গেছে।
  • হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা দীর্ঘ মহাপ্লাবনের পর ১০ মহররম দিনে জুদি পর্বতে নোঙর করে বলে বর্ণিত আছে।
  • হযরত ইব্রাহিম (আ.) আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়ে অলৌকিকভাবে রক্ষা পান এই মাসে।
  • হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান মহররমে।
  • কিছু বর্ণনা মতে, হযরত ঈসা (আ.) এই মাসেই জন্মগ্রহণ করেন বা আকাশে উত্তোলিত হন—যদিও এটি নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
ইবাদতের গুরুত্ব ও রোজা

রাসূল (সা.) মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখতেন এবং বিশেষভাবে ৯ ও ১০ মহররম বা ১০ ও ১১ মহররম রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। হাদীসে বলা হয়েছে, আশুরার রোজা পূর্ববর্তী বছরের গুনাহ মাফের উপায় হতে পারে।

মহররম মাস কেবল শোক ও স্মৃতির মাস নয়, বরং এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মত্যাগ এবং ন্যায়ের পথে অটল থাকার শিক্ষা দেয়। ইমাম হুসাইনের কারবালা প্রান্তরে শাহাদাত মুসলিম উম্মাহকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়—ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায় না।