Home সারাদেশ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিঝুমের মৃত্যু, ভোলার গ্রামে মাতম

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিঝুমের মৃত্যু, ভোলার গ্রামে মাতম

নিঝুম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ভোলা: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাজিয়া তাবাসসুম নিঝুম আর নেই। সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিঝুমের বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। একই দুর্ঘটনায় তার ছোট ভাই আরিয়া নাশরাফ নাফিও গুরুতর দগ্ধ হয়ে ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। নয় বছর বয়সী নাফির শরীরের প্রায় ৯৫ শতাংশই পুড়ে গেছে।

দগ্ধ দুই ভাইবোনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের দাদা এ কে এম আলতাফ হোসেন মাস্টারের কণ্ঠ বারবার ভেঙে পড়ছে কান্নায়। বলেন, “ছেলেমেয়েকে ভালো মানুষ বানানোর জন্য আমার ছেলে নিরব ঢাকায় সংসার গড়েছিল। আজ সব শেষ হয়ে গেল।”

সাবেক সেনা কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম নিরবের দুই সন্তান নিঝুম ও নাফি উত্তরা দিয়াবাড়ি কামারপাড়ার বাসিন্দা। দুজনেই পড়াশোনা করত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে নিরব অনেক আগেই গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। এখন সেই স্বপ্নের শহরে নিঝুমের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। পরিবারের সদস্যরা জানালেন, নাফির অবস্থার কারণে মৃতদেহ গ্রামে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিঝুমকে উত্তরাতেই কবর দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিঝুমের মৃত্যুর খবর ভোলার দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগরে পৌঁছালে গ্রামে সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ। নিঝুমের চাচাতো বোন ইশরাত জাহান স্পি ও মুনতাহার ছোটবেলার স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। ইশরাত বলে, “২০২২ সালে নিঝুম আপুর সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল। এখন আর কোনোদিনও দেখা হবে না।”

চাচি মোরশেদা জানালেন, বিমান দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে পরিবারের কেউই স্বাভাবিক নেই। “নিরব ভাইয়ের ফোন বন্ধ পেয়ে আমরা আতঙ্কে ছিলাম। পরে জানতে পারি, দুই শিশু হাসপাতালে ভর্তি। খবর শুনেই নিরব ভাই স্ট্রোক করেন। তাকেও ভর্তি করতে হয় বার্ন ইনস্টিটিউটেই। একই হাসপাতালে এখন বাবা ও দুই সন্তান ভর্তি, কিন্তু নিঝুমের নিঃশ্বাস থেমে গেছে চিরতরে।”

নিহতের চাচা মো. হাসান বলেন, “গ্রামে যেন কাঁদছে, তাকে থামানোর কেউ নেই। বাতাস যেন ভারী হয়ে গেছে নিঝুমের শোকে। সবাই বলছে, এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু যেন আর কাউকে না দেখতে হয়।”

সংকটাপন্ন নিঝুমের ছোট ভাই নাফি। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। পরিবার শুধু দোয়া চায়—একটিবারের জন্য হলেও যেন ভাইটিকে বাঁচানো যায়।