বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের উড়াল পথ থেকে একটি ভারী বিয়ারিং প্যাড খুলে নিচে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে খেজুরবাগান মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কিশোরকাটি গ্রামে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন বলে জানা গেছে।
দুর্ঘটনার পরপরই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা উদ্ধার তৎপরতা চালান।
মেট্রোরেলের নবনিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নির্মাণ নকশায় ত্রুটির কারণে বিয়ারিং প্যাডটি খুলে পড়ে গেছে। এর আগেও একই ধরনের একটি দুর্ঘটনা খামারবাড়ি এলাকায় ঘটেছিল। জাপানিজ ঠিকাদারদের বিষয়টি সংশোধনের নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার সময় এক তরুণ ব্যাগ হাতে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ প্রায় ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাডটি ছিটকে পড়ে তার মাথায় লাগে। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। একই সঙ্গে প্যাডটি পাশে থাকা একটি চপ-শিঙ্গাড়া দোকানের ছাউনিতে আঘাত করে, এতে দোকানের কাঁচ ভেঙে দুইজন আহত হন।
তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) নাজমুল হক জানান, “নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত দুইজনও সেখানে চিকিৎসাধীন।”
গত বছর সেপ্টেম্বরে খামারবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের একটি পিলার থেকে একই ধরনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে, তখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ১১ ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিয়ারিং প্যাড হলো সেতু ও উড়ালপথের কাঠামোকে স্থিতিশীল রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ রাবার উপাদান, যা ভারী যানবাহনের চাপ সরাসরি পিলারে না গিয়ে সমানভাবে মাটিতে বিতরণ করে। নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না হলে এটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
দুর্ঘটনার ঘটনায় সড়ক ও রেল উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “নিহত ব্যক্তির পরিবারের দায়িত্ব মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ নেবে। প্রাথমিকভাবে ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পরে নিহতের পরিবারের কোনো কর্মক্ষম সদস্য থাকলে তাকে মেট্রোরেলে চাকরির সুযোগ দেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, সেতু বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রাজধানীর ফার্মগেটে এ ধরনের দুর্ঘটনা দ্বিতীয়বার ঘটায় নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। নগরবাসী এখন তদন্তের ফলাফল ও দায় নির্ধারণের অপেক্ষায়।










