সম্পাদকীয়
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোবাইল ফোন। যোগাযোগ, তথ্য অনুসন্ধান, বিনোদন সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু এই প্রযুক্তির নেপথ্যে লুকিয়ে আছে এক বিপজ্জনক সত্য—মোবাইলে মগ্নতা মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে রেললাইন, সড়কপথ কিংবা জনজীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মোবাইলে কথা বলার সময়ে মানুষের নিরাপত্তা সৃষ্ট হয় না। এর ফলে ঘটে যাচ্ছে মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা একের পর এক শোনাচ্ছি রেললাইনে মোবাইলে কথা বলার কারণে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণহানির ঘটনা। কিংবা সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বা রাস্তা পারাপারের সময় মোবাইলে ব্যস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা। এসব ঘটনা শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবই নয়, আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রতিফলন। অনেকেই ‘একটু কথা’ বলতে গিয়ে নিজের এবং অপরের জীবন বিপন্ন করেন।
প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। মোবাইল ফোনের আড়ালে থেকে আমরা আশপাশের ঝুঁকি, সতর্ক সংকেত শুনতে পারি না; পথচারী, চালক কিংবা যাত্রী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কমে যায়। এ জন্য শুধু ব্যক্তিগত সচেতনতা নয়, প্রশাসনকেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালাতে হবে।
একটি জীবন অমূল্য। প্রযুক্তিকে শাসন করতে না পারলে তা আবার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই গম্ভীর বাস্তবতাকে আমরা আর উপেক্ষা করতে পারব না। মোবাইলে ‘একটু কথা’ বলতে গিয়ে যেন ‘চিরস্থায়ী নীরবতা’ বেছে নিতে না হয়—সেজন্য আমাদের সকলের সদা সতর্ক থাকতে হবে। নিরাপত্তা মানেই জীবন বাঁচানো, আর জীবনের সম্মানে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য।
এখন সময় প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবন রক্ষা করার, মোবাইল মগ্নতা থেকে দূরে থাকার। সবার জন্য একটিই আবেদন—যেখানে চলাফেরা, সেখানে মোবাইল ফোনকে কিছুক্ষণের জন্য সরিয়ে রাখুন। কারণ জীবনের কোনো বিকল্প নেই।