সম্পাদকীয়
রাজনীতি কেবল শক্তি প্রদর্শন কিংবা ক্ষমতার লড়াই নয়। সত্যিকার অর্থে এটি জনসেবা ও সমাজ গঠনের মাধ্যম। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে প্রায়ই দেখা যায় নির্বাচনী বা রাজনৈতিক কর্মসূচির পর শহরগুলো পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে ওঠে, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে এটি একটি অপ্রয়োজনীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বিএনপি। তাদের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের পর নেতাকর্মীরা নিজেরাই শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক থেকে সমস্ত রাজনৈতিক প্রচারণামূলক উপকরণ সরিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছেন। এটি শুধু একটি পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি নয়; এটি রাজনীতির প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচায়ক, যেখানে রাজনৈতিক দল নিজ দায়িত্ব বুঝে সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।
জেলা ও উপজেলা বিএনপির এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সামনে স্পষ্ট বার্তা যাচ্ছে: রাজনীতির কুশলী ও দায়িত্বশীল চেহারা গড়ে তুলতে হলে পরিবেশ ও জনসেবার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শেষে নিজেদের সরঞ্জাম সরিয়ে ফেলা এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সকলের জন্য উদাহরণ হওয়া উচিত।
শহর ও গ্রামের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা কেবল নাগরিকদের কর্তব্য নয়, রাজনৈতিক দলেরও মৌলিক দায়িত্ব। কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধি এবং জনস্বার্থের সেবক। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সুস্থ সমাজ গঠনের ভিত্তি। সুতরাং রাজনৈতিক দলের এই উদ্যোগ সমাজে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হবে।
আমরা আশা করি, মৌলভীবাজারের এই দৃষ্টান্ত দেশের অন্য সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দায়িত্ববোধের ছাপ রেখে তারা যদি জনসেবায় আরও সক্রিয় হয়, তবে দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসা সম্ভব হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, রাজনীতি হবে তখনই শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী, যখন তা জনসেবামূলক, দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব হবে। মৌলভীবাজার বিএনপির পরিচ্ছন্নতা উদ্যোগ সেই পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সারাদেশে এই মনোভাব ছড়িয়ে পড়ুক—এটাই আমাদের কামনা।
